নিত্যপণ্যের দামে অস্থিরতা
বাজারে গরিব মানুষের শুধুই হা-হুতাশ
উচ্চমূল্যের কশাঘাতে বেকায়দায় পড়েছেন মধ্যবিত্তরা
ইয়াসিন রহমান
প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাজারে পণ্যের বাড়তি দামে এক প্রকার অস্থিরতা চলছে। মিলারদের কারসাজিতে নিয়ম করে বাড়ানো হচ্ছে চালের দাম। এক কেজি সরু চাল কিনতে ক্রেতাকে ৯০ টাকা গুনতে হচ্ছে। গরিবের মোটা চালের দাম গিয়ে ঠেকেছে ৬০ টাকা কেজি। শুধু তাই নয়, খুচরা বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের ডালের দামও বেড়েছে হু হু করে। ডিম দিয়েও ভাত খাওয়ার জো নেই। জডনপ্রতি বেড়েছে ১০ টাকা। হঠাৎ করেই কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এছাড়া খেটে খাওয়া মানুষের সাধ থাকলেও উচ্চ মূল্যের কারণে সাধ্যের মধ্যে মাছ-মাংস কিনতে পারছেন না। উচ্চমূল্যের কষাঘাতে মধ্যবিত্তরাও পড়েছেন বেকায়দায়। কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী প্রতিবছর একই প্রক্রিয়ায় মূল্য কারসজি করে ক্রেতাকে ঠকাচ্ছেন। তবে এর কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পাশাপাশি ভোক্তাকে স্বস্তিতে রাখতে তদারকি সংস্থাগুলোর কোনো গবেষণা নেই। নেই কোনো বাজার তদারকির পরিকল্পনা। ফলে বছরের পর বছর বাজারে ভোক্তার অস্বস্তি বাড়ছে। তাই সরকারের উচিত হবে বাজারে নজর দেওয়া।
শুক্রবার সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কনপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তার দৈনিক পণ্যমূল্য তালিকায় উল্লেখ করেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে বেড়েছে পাইজাম চালের দাম। সেখানে বলা হয়েছে, এদিন রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭৫ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগেও সর্বোচ্চ ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া খুচরা বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার প্রতি কেজি গরিবের মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। যা গত এক মাস ধরেই এই বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ভালো মানের প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৮৭ টাকায়। যা এক মাস আগেও ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি মানের মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। যা আগে ৭৫ টাকা ছিল। প্রতি কেজি নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা। যা আগে ৮৫ টাকা ছিল। বিআর ২৮ কেজিপ্রতি ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মসুর ডাল (সরু) বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা। যা সাত দিন আগেও ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি মানের প্রতি কেজি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা। যা সাত দিন আগে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মোটা মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১১০ টাকা। পাশাপাশি দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৩৭৫ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগেও ৩৭০ টাকা ছিল। সঙ্গে লিটারপ্রতি ২ টাকা বেড়ে পাম তেল সুপার বিক্রি হচ্ছে ১৬২ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগেও ১২৫ টাকা ছিল। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৬০-১৭০ টাকা বিক্রি হলেও সোনালি মুরগির কেজি ৩২০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। যা এক সপ্তাহ আগেও ২০ টাকা কমে ক্রেতারা কিনতে পেরেছেন। আর গরুর মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকা।
রাজধানীর নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা ভ্যানচালক মো. হাবিবুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, বাজারে এসেছি আধাঘণ্টা হয়েছে। কিন্তু কী রেখে কী কিনব বুঝতে পারছি না। যে টাকা আছে তা চাল, ডাল কিনতেই হবে। পরে টাকা থাকলে এক পদ সবজি কিনব। কিন্তু চালের দাম শুনেই হিমশিম খাচ্ছি। গত কয়েক মাস ধরেই দাম বাড়ছে। এখন বাজারে এসে দেখি ডালের দামও বেড়েছে। মাছ-মাংস কেনার সামর্থ্য নেই। তাই ডিম কিনে বাড়ি ফিরব, তারও উপায় নেই। এই পণ্যের দামও বাড়ানো হয়েছে। সব মিলে মানসিক যন্ত্রণায় আছি। আমাদের জন্য কেউ নেই।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, দেশি শসা ১০০ টাকা, হাইব্রিড শসার কেজি ৮০ টাকা, করলা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০-৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, পেঁপের কেজি ৩০ টাকা, কাঁচামরিচের কেজি ২৪০ টাকা, টমেটো ১৮০ টাকা, গাজর ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি পিস লাউ ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
স্বস্তি নেই মাছের বাজারেও। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও দাম কমেনি। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি রুই ও কাতল বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকা। প্রতি কেজি পাবদা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪০০ টাকা, চিংড়ি ৬৫০-৭০০, টেংরা ৬০০-৭০০, শিং ৪০০-৪৫০ টাকা। এছাড়া কম দামের মাছের মধ্যে তেলাপিয়া ও পাঙ্গাশ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২১০ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, বাজারে অভিযান থেমে নেই। অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে প্রতিদিন বাজারে তদারকি করা হচ্ছে। কী কী কারণে পণ্যের দাম বেড়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অসাধু পন্থায় দাম বাড়ালে আইনের আওতায় এনে পণ্যের দাম সহনীয় করা হচ্ছে। ভোক্তার স্বার্থে অধিদপ্তরের কার্যক্রম চলমান থাকবে।
