Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

আখাউড়া স্থলবন্দর

কমেছে আমদানি রপ্তানি বিপাকে ব্যবসায়ীরা

Icon

মহিউদ্দিন মিশু, আখাউড়া

প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশ-ভারতের চলমান কূটনৈতিক রেষারেষির জেরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে কমেছে আমদানি-রপ্তানি। এপথে যাত্রী পারাপার হ্রাস পাওয়ায় কমেছে ভ্রমণকরও। বাণিজ্য কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বন্দরের ব্যবসায়ীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের পর থেকে চলছে দুই দেশের কূটনৈতিক টানাপোড়েন। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশ পালটাপালটি বিধিনিষেধ আরোপ করায় আখাউড়া বন্দরে কমছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য।

আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছে ৪৪ হাজার ৩২২.০৯ মেট্রিক টন পণ্য, যার বাজারমূল্য ৫১৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। রপ্তানি পণ্যের মধ্যে ছিল সিমেন্ট, তাজা মাছ, শুঁটকি, বর্জ্য তুলা, ম্যাঙ্গো ফ্রুট ড্রিংকস, প্লাস্টিকের আসবাব, মেলামাইন সামগ্রী, পিভিসি পাইপ, পিভিসি দরজা, থ্রেসিং মেশিন, ডিফরমেট বার, পাথর, আটা-ময়দা, ভোজ্যতেল ও প্রক্রিয়াজাত খাবার।

অপরদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল ৫৪ হাজার ৪৪২.২২ মেট্রিক টন পণ সামগ্রী, যার আর্থিক মূল্য ছিল ৪২৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। যদিও পরিমাণে কিছু কম হলেও আর্থিক মূল্যে ৮৭ কোটি টাকার বেশি রপ্তানি হয়েছে। এর পেছনে বড় জোগান জুগিয়েছে দেশীয় তাজা মাছ।

এদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ১৫৮ টন যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ৩৮ হাজার ৭৮৩ টন।

আখাউড়া কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে স্থলবন্দর দিয়ে ৭ কোটি ৩১ লাখ ৮২ হাজার ৭৫৯ টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে। এ আমদানি থেকে ৪ কোটি ১৬ লাখ ৮৪ হাজার ৬১৯ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। কিন্তু পরিমাণগত দিক থেকে তা অনেক কম; এই সময়ে বন্দর দিয়ে মাত্র ১৫৮ দশমিক ৯১ টন জিরা, ডাল, কাজুবাদাম ও আগরবাতি আমদানি হয়েছে।

অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থলবন্দর দিয়ে ৭ কোটি ৫ হাজার ২০৩ দশমিক ৯ টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে। এ আমদানি থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪ কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার ৫৪৬ টাকা। এই সময় বন্দর দিয়ে ৩৮ হাজার ৭৮৩ দশমিক ৫ টন পেঁয়াজ, আদা, জিরা ও পাথর আমদানি হয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেশি টাকার পণ্য আমদানি হলেও পরিমাণ ও রাজস্ব আয় কমেছে আখাউড়া স্থলবন্দরে। অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট সীমান্তপথে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যাত্রীদের ভ্রমণকর থেকে রাজস্ব আদায় দ্বিগুণের বেশি কমেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া-আগরতলা আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট সীমান্ত দিয়ে দুদেশে যাত্রীদের যাতায়াত উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

আখাউড়া ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্ট সূত্রে জানা গেছে, আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬০ হাজার ৪৫২ জন যাত্রী ভারতে ভ্রমণ করেছেন। এ প্রক্রিয়ায় ভ্রমণকর থেকে সরকারের আয় হয়েছে মাত্র ৬ কোটি ১ লাখ ৭০ হাজার।

অপরদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ লাখ ৩৯ হাজার ১৫৪ জন যাত্রী আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট সীমান্ত দিয়ে ভারতে ভ্রমণ করেছেন। ভ্রমণকর থেকে সরকারের আয় হয়েছে ১৩ কোটি ৯১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা।

এ ছাড়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত থেকে ৪০ হাজার ৫০৯ জন যাত্রী বাংলাদেশে এসেছেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসেছেন ৬৫ হাজার ৮৬৭ জন।

আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্ট ইনচার্জ ওসি মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তার যুগান্তরকে বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কে বৈরিতা চলছে। এতে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার কমেছে। ভারতীয় ভিসা জটিলতায় যাত্রী যাতায়াতও হ্রাস পেয়েছে। এখন বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা ও স্টুডেন্ট ভিসাধারী এবং ভারত থেকে ট্যুরিস্ট ভিসাধারীরা যাওয়া-আসা করছে। এতে রাজস্ব আদায়েও প্রভাব পড়েছে।

আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী রাজিব উদ্দিন ভূঁইয়া যুগান্তরকে বলেন, পূর্বোত্তর ভারত থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত পণ্য ব্যতিরেকে অন্যান্য পণ্যসামগ্রী আমদানির অনুমতি পাওয়া গেছে এপথে বাণিজ্য বাড়বে এবং সরকারও রাজস্ব পাবে।

আখাউড়া স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি নিছার উদ্দিন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের বিধিনিষেধের কারণে রপ্তানিতে প্রভাব পড়েছে। এটি শতভাগ রপ্তানিমুখী বন্দর। তারপরও আগে যা কিছু আমদানি হতো, গত অর্থবছরে তা একেবারে কমে গেছে।

আখাউড়া বন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) মো. মাহমুদুল হাসান যুগান্তরকে জানান, কর্মচাঞ্চল্য আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে স্থবিরতা বিরাজ করছে। রপ্তানির পাশাপাশি আমদানি বাড়লে রাজস্ব আয়ও বাড়বে এবং প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে আখাউড়া স্থলবন্দরে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম