Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ

খুলনায় ‘ফরিদ মোল্লা’কে নিয়ে বিপাকে বিএনপি!

দল থেকে তদন্ত কমিটি গঠন * স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকেও তদন্তের নির্দেশ

নূর ইসলাম রকি

নূর ইসলাম রকি

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

খুলনায় ‘ফরিদ মোল্লা’কে নিয়ে বিপাকে বিএনপি!

খুলনা সদর থানায় দলের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা ফরিদ আহমেদ। ছবি সংগৃহীত

খুলনা সদর থানায় দলের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা ফরিদ আহমেদকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে মহানগর বিএনপি। তার বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজির অভিযোগের পাশাপাশি বিগত দিনে একাধিক হত্যা মামলার বিষয়টি সম্প্রতি বেশ আলোচনার সৃষ্টি করেছে। আগামী নির্বাচনের আগে সদর থানা বিএনপির মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগে দলের জন্যও বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। এদিকে খুলনার রেলওয়ের সম্পত্তির দখল, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদার বিষয়ে খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকেও তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর থেকে আলোচনায় উঠে আসেন মোল্লা ফরিদ আহমেদ। খুলনা রেলওয়ে মার্কেট এবং রেলওয়ের সম্পত্তি দখল করা নিয়ে তার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষ করে তার বিরুদ্ধে রেলওয়ে স্কুলের পেছনের সীমানা প্রাচীর দখল করে ডাক্তারবাড়ির সঙ্গে জায়গা দখল করে একাধিক ঘর নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন মার্কেট দখলসহ নগরীর কালীবাড়ি রোডস্থ মেসার্স আর এম ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. আল আমিন মিঠুর ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আগ্নেয়াস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ২৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগও তার বিরুদ্ধে রয়েছে। সর্বশেষ ১১ আগস্ট সোনাডাঙ্গা এবং ১২ আগস্ট সদর থানায় মোল্লা ফরিদের বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি করেছেন খোদ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এই ঘটনায় খুলনা জেলা প্রশাসকের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপংকর দাশ বিশেষ ক্ষমতা আইনে মোল্লা ফরিদকে আটকাদেশের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে। এছাড়া পুলিশের সূত্র জানায়, মোল্লা ফরিদের বিরুদ্ধে সোহেল, মোতালেব মোড়ল, কমরেড রতন সেন হত্যা মামলাসহ ২২টির বেশি মামলা এবং প্রায় ১০টির মতো সাধারণ ডায়েরি রয়েছে। মোল্লা ফরিদ অভিযোগ সম্পর্কে যুগান্তরকে বলেন, আমি রেলওয়ের কোনো জায়গা দখল করিনি। শিল্প ব্যাংকের পাশের জমিটি আমার নামে লিজ নেওয়া। কারা, কোথায় দখল করেছে এটা আমার জানা নেই। ব্যবসায়ী মিঠু আমার আত্মীয়। ওই দোকানটি আমার ছিল। এই বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে কয়েক দফা বসাবসি হয়েছে। কোনো চাঁদাবাজি ও দখলের ঘটনা নেই। বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাকে হেনস্তা করার জন্য বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। নগর বিএনপির সাবেক এক নেতা এবং খুলনার সাবেক এক সংসদ সদস্য আমার বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটাচ্ছে। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, খুলনার এক ব্যবসায়ীকে মারধর ও চাঁদা চাওয়ার অভিযোগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করা হলে সেখান থেকে তদন্তের জন্য নির্দেশনা এসেছে। খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সানওয়ার হুসাইন মাসুম যুগান্তরকে জানান, সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। এ বিষয়ে আমি কথা বলতে পারব না। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলুন। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তাকে ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি।

মহানগর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা শরিফুল ইসলাম টিপু যুগান্তরকে বলেন, বুধবার মোল্লা ফরিদের বাড়িতে কোনো অভিযান হয়নি। একটি পক্ষ ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে। তবে এর কয়েকদিন আগে মোল্লা ফরিদের বাসায় পুলিশ গিয়েছিল। কারণ মোল্লা ফরিদের জীবননাশের হুমকি রয়েছে-এমন তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে। তাই তাকে সতর্ক করতে তার বাড়ি গিয়েছিল। মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন যুগান্তরকে বলেন, ইতোমধ্যে মোল্লা ফরিদের বিষয়গুলো সুষ্ঠুভাবে তদন্তের জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। তিন সদস্যের কমিটিতে রেহেনা ঈসাকে প্রধান করে দুজন আইনজীবী রাখা হয়েছে। এরপর সত্য-মিথ্যা যাচাই করা হবে। যদি কারও কারণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, সেক্ষেত্রে দল সিদ্ধান্ত নেবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। মহানগর বিএনপির সভাপতি এস এম শফিকুল আলম মনা যুগান্তরকে জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা রয়েছে কোনো চাঁদাবাজ, দখলবাজকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। কারোর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলে সত্যতা যাচাই করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে আমাদের জিরো টলারেন্স।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম