Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

রাজশাহীতে জুলাই আন্দোলনে গুলিবর্ষণ

হত্যা মামলার আসামি যুবলীগ নেতা রনি জামিনে মুক্ত

ছাত্র হত্যাকারীর মুক্তির খবরে তোলপাড়, ক্ষোভ

Icon

আনু মোস্তফা, রাজশাহী

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গত বছরের ৫ আগস্ট রাজশাহীতে ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলিবর্ষণকারী মহানগর যুবলীগ নেতা বাপ্পি চৌধুরী রনির (৩৬) জামিন লাভ ও কারামুক্তির ঘটনায় তোলপাড় চলছে। গত ৪ আগস্ট দুটি হত্যাসহ মোট তিনটি মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভ করে শীর্ষ সন্ত্রাসী রনি। গত ১২ আগস্ট সন্ধ্যায় রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে চলে যায় সে। বাপ্পি চৌধুরী রনি নগরীর রাজপাড়া থানার পুলিশ লাইন ভেড়িপাড়ার বাসিন্দা। নগরীর ৪নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি। রনির মুক্তির ঘটনা জানাজানি হলে রাজশাহীতে জুলাই আন্দোলনে নিহতদের পরিবার ও আহতদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। রনিকে পুনরায় গ্রেফতার ও তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

গত বছর ১২ নভেম্বর রনিকে রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। একদিন পর ১৩ নভেম্বর তাকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বোয়ালিয়া মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়। রনিকে দুটি হত্যাসহ তিনটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। সেই থেকে রনি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিল।

এদিকে গুলি চালিয়ে ছাত্র হত্যা ও আহত করার অভিযোগে তিনটি গুরুতর মামলায় জামিন পেয়ে রনির মুক্তির বিষয়টি গত ১৩ আগস্ট জানাজানি হয় রাজশাহীতে। এরপর পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, কারা কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনিক পর্যায়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। পুলিশ বলছে তারা রনিকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

জানা গেছে, রনি পেয়ে মুক্তিলাভের দুদিন পর ১৪ আগস্ট সুপ্রিমকোর্টের চেম্বার জজ আদালতে তার জামিনাদেশ স্থগিত হয়েছে। তবে এই বিষয়ে পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য হয়নি। যুবলীগ নেতা রনির প্রকাশ্যে গুলি চালানোর একটি অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) বিচার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর হাসানুল বান্নার দাবি, যুবলীগ ক্যাডার রনির জামিনের বিষয়টি জানতে পেরে তারা রাজশাহী পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও অন্যান্য সংস্থাকে অবহিত করেছিলেন। তবে বিশেষ শাখা ও সংস্থাগুলোর কাছে তার জামিনের বিষয়ে অগ্রিম কোনো তথ্য ছিল না। ফলে রনি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে চলে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাপ্পি চৌধুরী রনি রাজশাহী মহানগর যুবলীগের শীর্ষ ক্যাডার জহিরুল ইসলাম রুবেলের অন্যতম সহযোগী। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজশাহীতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীতে প্রবেশকালে আলুপট্টি মোড়ে বাধা দেয় পুলিশ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা। এ সময় পুলিশের পাশাপাশি সামনে থেকে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় যুবলীগ ক্যাডার রুবেল ও তার সহযোগীরা। এদের মধ্যে যুবলীগ ক্যাডার রনিও ছিল।

সংগৃহীত ওইদিনের ভিডিওচিত্রে রুবেলের পাশাপাশি রনিকে পিস্তল হাতে ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে দেখা গেছে।

ওইদিন দুপুরের দিকে শাহমখদুম কলেজের কাছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন বরেন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাকিব আনজুম (২৫)। নিহত সাকিব নগরীর রানীনগর এলাকার মাইনুল হকের ছেলে।

একই দিনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ক্যাডারদের গুলিতে গুরুতর আহত হন ইসলামী ছাত্রশিবিরের মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আলী রায়হান (২৪)। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ৮ আগস্ট সন্ধ্যায় রায়হান মারা যান। এসব হত্যার ঘটনায় হত্যা মামলার আসামি যুবলীগ নেতা বাপ্পি চৌধুরী রনি।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) গাজিউর রহমান জানান, যুবলীগ নেতা রনির বিরুদ্ধে দুটি হত্যাসহ চারটি মামলার তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে ২০০৯ সালের একটি পুরোনো মামলাও রয়েছে। পুলিশ রনিকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উচ্চ আদালত থেকে বিশেষ কোনো মামলার কোনো আসামির জামিন হলে সে মামলার বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে জানানোর কথা কোর্ট পুলিশের। কিন্তু এই বিষয়ে কোর্ট পুলিশ থেকে কিছু জানানো হয়নি কারা কর্তৃপক্ষকে। এদিকে ছেলে হত্যা মামলার আসামি সন্ত্রাসী বাপ্পি চৌধুরী রনি জামিনে বেরিয়ে যাওয়ার খবরে নিহত সাকিব আনজুমের বাবা মাইনুল হক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী রনির জামিনে বেরিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে আমরা খুবই হতাশ হয়েছি। স্পর্শকাতর এসব মামলার বিষয়ে আদালত পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সবার সতর্ক থাকা উচিত ছিল। তিনি ছেলে হত্যার মামলাটির দ্রুত চার্জশিটসহ অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহ আলম খান বলেন, রনির বিষয়ে কোনো পক্ষ থেকেই তাদের অগ্রিম কোনো তথ্য জানানো হয়নি। আদালত থেকে জামিনের সঠিক কাগজপত্র এলে কাউকে আটকে রাখার ক্ষমতা কারা কর্তৃপক্ষের নেই। রনি মুক্তি পাওয়ার পর বিভিন্ন সংস্থা থেকে তাদের এই বিষয়ে জানানো হয়। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, সন্ত্রাসী রনি কীভাবে কারাগার থেকে বেরিয়ে গেল তা তারা খতিয়ে দেখছেন। এক্ষেত্রে পুলিশের কারও অবহেলা থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম