কনফারেন্সের উদ্বোধনীতে ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ৫০ শতাংশই ভূতুড়ে উপকারভোগী
সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি থাকা দরকার
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ৫০ শতাংশই ভূতুড়ে উপকারভোগী। তারা প্রকৃত গরিব না হলেও হয় ভূতুড়ে, না হয় রাজনৈতিক উপকারভোগী। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে আমরা জাতীয় পর্যায়ে একটি জনসংখ্যা রেজিস্টার তৈরির কাজ করছি। এটা হলে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় স্বয়ংক্রিয়ভাবেই জানা যাবে কারা দরিদ্র এবং কোন পর্যায়ের দরিদ্র্য। সোমবার রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী ‘ন্যাশনাল কনফারেন্স অন সোশ্যাল প্রটেকশন-২০২৫’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আয়োজিত কনফারেন্সে ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ন্যায্যতাভিত্তিক সমাজে চরম দারিদ্র্য থাকতে পারে না। আমরা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির একটি রোডম্যাপ দিয়ে যেতে চাই। নির্বাচিত সরকার সেখান থেকে শুরু করতে পারবে। তিনি আরও বলেন, একটি সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি থাকা দরকার। আমরা উচ্চ আয়ের দেশে যেতে চাচ্ছি, তাই সবার জন্য ন্যূনতম সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি থাকতে হবে। আমরা ব্যয়ের ক্ষেত্রে যতটুকু দরিদ্র তার চেয়ে অনেক বেশি আয়ের ক্ষেত্রে দরিদ্র। এ অবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি হবে চাহিদাভিত্তিক অর্থাৎ মানুষ কী ধরনের সহায়তা চায়। যেমন নদীভাঙা, বেকার, শিশু বা মায়েদের জন্য আলাদা কর্মসূচি নিতে হবে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা আরও বলেন, সামাজিক সুরক্ষা শুধু অর্থনৈতিক চাহিদা নয়; এটি একটি নৈতিক দায়িত্ব। একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে এবং স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের প্রস্তুতিতে বাংলাদেশকে অবশ্যই এমন একটি সর্বজনীন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যা সবার মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
সমতাভিত্তিক সমাজের পথে যাত্রা-প্রতিপাদ্য সামনে রেখে এ কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশল (২০১৫-২০২৬) শেষ পর্যায়ে পৌঁছানোয় এবং আগামী প্রজন্মের জন্য নতুন কাঠামো তৈরির আগে এ সম্মেলনকে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আবদুর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ হাসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, বীর প্রতীক। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে ছিলেন জনপ্রশান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেসুর রহমান, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মনজুর হোসেন এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয়ক ও সংস্কার বিভাগের সচিব জাহেদা পারভীন। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফেন লিলার, অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার ক্লিনটন পোবকে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যাম্বাসেডর মিকেল মিলার।
ফারুক-ই-আজম বলেন, অভিযোজনযোগ্য ও শক-রেসপনসিভ সামাজিক সুরক্ষা কোনো বিকল্প নয়; এটি স্থিতিশীলতার ভিত্তি। স্টেফান লিলার বলেন, আমাদের বুঝতে হবে সামাজিক সুরক্ষা কোনো দয়া নয়; এটি একটি অধিকার এবং রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে সামাজিক চুক্তির স্তম্ভ। ক্লিনটন পোবকে বলেন, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, অভিযোজনযোগ্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম ব্যবস্থা গড়তে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে পেরে অস্ট্রেলিয়া গর্বিত।
ড. শেখ আবদুর রশিদ বলেন, বাংলাদেশ সরকার দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থিতিশীল ও ন্যায়সঙ্গত সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে। এই সম্মেলনের আলোচনা আমাদের আগামী প্রজন্মের সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল নির্ধারণে কার্যকর পথ দেখাবে। তিন দিনের এই কনফারেন্সে আলোচনায় আসবে গত এক দশকের সংস্কার অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যতের অগ্রাধিকার, অন্তর্ভুক্তিমূলক ভাতা, শ্রম ও জীবিকা সহায়তা, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় অভিযোজনমূলক পদক্ষেপ এবং জেন্ডার-সংবেদনশীল কৌশল। এছাড়াও সেশনগুলোতে গুরুত্ব পাবে ডিজিটাল উদ্ভাবন যেমন ডায়নামিক রেজিস্ট্রি ও শক-রেসপনসিভ সিস্টেম, যা স্থিতিশীলতা তৈরি ও সেবা প্রদানে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
