শাহ্ ফরিদের নামে ফরিদপুর নামকরণ
সাক্ষী হয়ে আছে শাহ্ ফরিদ দরগাহ মসজিদ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আজমীর শরিফের মহান সাধক এবং দরবেশ খাজা মইনউদ্দিন চিশতির (রহ.) শিষ্য শাহ্ ফরিদ ইসলাম প্রচারের জন্য দরগার প্রাচীন ছায়াঘেরা এক বটগাছের নিচে আশ্রয় নেন। ফরিদপুরের উপকণ্ঠে ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এ দরগাটি। বর্তমান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সংলগ্ন উত্তরে প্রধান সড়কের পাশে এটির অবস্থান। মহান এই সাধক শাহ্ ফরিদের নাম অনুসারে ফরিদপুর জেলার নামকরণ করা হয়েছে। প্রাচীন সেই বটগাছটি এখন আর নেই। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে তিনতলা বিশিষ্ট সুদৃশ্য মসজিদ। যেটি শাহ ফরিদ দরগা মসজিদ নামে পরিচিত।
ফরিদপুরের পূর্বনাম ছিল ফতেহাবাদ। বাংলায় পর্তুগিজ বণিকদের আগমনের পরে ফতেহাবাদে জমিদারি প্রথা চালু হয় এবং তখন থেকে একই সঙ্গে এখানে ব্যবসাকেন্দ্র ও সেবাকেন্দ্র হিসাবে উন্নতি হতে থাকে। অনেক আউলিয়া, দরবেশ এবং পুণ্যাত্মার আবাসভূমি হিসাবে এ অঞ্চল সুপ্রসিদ্ধ ছিল। জানা যায়, প্রাচীন ঐতিহ্যের এই লীলাভূমি বহু জলা ও জঙ্গলে পরিপূর্ণ থাকায় সে সময় তেমন কেউই এ অঞ্চলে আবাদ করার সাহস পাননি। তখন ফতেহ আলী নামে একজন মুসলিম শাসক বহু পরিশ্রম ও কষ্টে এই অঞ্চল মানুষ্য বসবাসোপযোগী করে গড়ে তোলেন। ফলে তার নাম অনুসারে এ অঞ্চলকে ফতেহাবাদ নামকরণ করা হয়।
ফতেহ আলীর পুরো নাম জালাল উদ্দিন ফতেহ শাহ। তিনি লক্ষণাবতীর শাসক ছিলেন। এরপর আলাউদ্দিন হুসেইন শাহ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে ১৪৯৩ খ্রিস্টাব্দে ফতেহ শাহর নামানুসারে পূর্বের ধলেশ্বরী পরগণার নাম বদলিয়ে ফতেহাবাদ রাখা হয়। শুধু তাই নয় তিনি ফতেহাবাদকে বাংলার একটি প্রধান শহর হিসাবে গড়ে তোলেন। ভারতের পবিত্র ভূমি আজমীর শরিফের মহান সাধক এবং দরবেশ খাজা মইনউদ্দিন চিশতির (রহ.) শিষ্য শাহ ফরিদ (রহ.) সে সময়ে বর্তমান ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সংলগ্ন স্থানে বহু পুরাতন একটা বটগাছের নিচে চিল্লা স্থাপন করেন। তখন সেই স্থানটি ছিল উন্মুক্ত এবং প্রাচীন বটগাছের ছায়া ঢাকা। আশপাশে কোনো স্থাপনা তখন তৈরি হয়নি। এই চিল্লা তথা বটগাছের নিচে বসে শাহ ফরিদ (রহ.) ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান, ইসলামী জলসা, জিকির আজকার, হামদ, নাতের আসর বসাতেন।
লোকমুখে শোনা যায়, এর বেশ কয়েক বছর পর পদ্মা নদী ভাঙতে ভাঙতে একবার এই চিল্লা বা দরগার নিকট চলে আসে। পদ্মার ভাঙন দেখে এ অঞ্চলের মানুষের মনে বিষাদের ছায়া নেমে আসে। তখন হাজার হাজার মানুষ আসেন শাহ ফরিদ (রহ.)-এর কাছে। তিনি সবাইকে নিয়ে মহান আল্লাহর দরবারে হাত তোলেন এই স্থান তথা দরগাটি যাতে পদ্মা নদীর সর্বনাশা ভাঙন থেকে রক্ষা পায়। তখন তাদের সেই সম্মিলিত ফরিয়াদ মঞ্জুর হয়েছিল। পদ্মার উত্তাল স্রোত স্থিমিত হয়ে চলে যায় এই দরগা থেকে ৭-৮ কিলোমিটার দূরে। জনশ্রুতি রয়েছে, সাধক শাহ ফরিদের জন্য বড় ধরনের ঝড়-তুফান, বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা পান ফরিদপুরের জনগণ।
শাহ ফরিদ জামে মসজিদের পেশ ইমাম মওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, শহরের উপকণ্ঠে স্থাপিত শাহ্ ফরিদ দরগা মসজিদটি কালের সাক্ষী হয়ে রয়েছে ফরিদপুরবাসীসহ দেশের মানুষের কাছে। অনেকে এ মসজিদটি দেখতে আসেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। অনেকে এখানে নামাজ আদায় করেন মনের আশা নিয়ে। এ মসজিদটি সগর্বে দাঁড়িয়ে রয়েছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেঁষে।

