Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

পদ বাণিজ্য-টেন্ডারবাজি-সম্মেলনে হামলা

পিরোজপুরে ভেঙে দেওয়া হলো বিএনপি ও ছাত্রদলের কমিটি

আকতার ফারুক শাহিন

আকতার ফারুক শাহিন

প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পিরোজপুরে ভেঙে দেওয়া হলো বিএনপি ও ছাত্রদলের কমিটি

নেতৃত্ব ধরে রাখতে দলে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতাদের পুনর্বাসন, ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের অবমূল্যায়ন এবং সর্বশেষ উপজেলা বিএনপির সম্মেলনে ছাত্রদলের হামলার পর ভেঙে দেওয়া হয়েছে পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। এই কমিটির বিরুদ্ধে রয়েছে বেপরোয়া টেন্ডারবাজি ও পদ বাণিজ্যের অভিযোগ। বুধবার রাতে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে কমিটি ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। একইদিনে স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে জেলা ছাত্রদলের কমিটি। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে জানানো হয় এই নির্দেশনা। কী কারণে এই দুই কমিটি বিলুপ্ত আর স্থগিত করা হলো তা অবশ্য লেখা হয়নি কোনো চিঠিতেই। কমিটি ভেঙে দেওয়ার খবরে পিরোজপুরে বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আনন্দের বন্যা। রাতে সেখানে মিষ্টি বিতরণসহ আনন্দ উল্লাস করেন মাঠপর্যায়ের কর্মীরা। একই সঙ্গে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও আনন্দ উল্লাস করেন জেলা শহরে।

অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেনকে আহ্বায়ক ও ওয়াহিদুজ্জামান লাভলু গাজীকে সদস্য সচিব করে ২০২২ সালে গঠিত হয় পিরোজপুর জেলা বিএনপির কমিটি। জুলাই বিপ্লবের আগে এই কমিটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে খুব একটা সক্রিয় না থাকলেও ৫ আগস্টের পর সদর্পে মাঠে নামেন কমিটির নেতারা। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পরপরই দলের নেতাদের বিরুদ্ধে উঠতে শুরু করে টেন্ডার, দখল ও চাঁদাবাজিসহ নানা সন্ত্রাসের অভিযোগ। আওয়ামী লীগ আমলে রিকশায় চড়তে না পারা কিছু নেতা বনে যান বাড়ি-গাড়ি ফ্ল্যাট আর বিপুল ভূসম্পত্তির মালিক। সেই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে ওঠে বেপরোয়া সন্ত্রাসের অভিযোগ।

বছরখানেক আগে সারা দেশের মতো পিরোজপুরেও শুরু হয় বিএনপি পুনর্গঠনের কার্যক্রম। প্রথম থেকেই এখানে ওঠে বিএনপির বিভিন্ন পদে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন ফ্যাসিস্ট দলের নেতাদের পুনর্বাসনের অভিযোগ। সেই সঙ্গে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে আত্মীয়স্বজন এমনকি ঘরের কর্মচারীদের পর্যন্ত পদ-পদবি দিয়ে আধিপত্য বজায় রাখার ষড়যন্ত্রে মাতেন বর্তমান নেতারা। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও প্রাথমিক সদস্য ফরম পূরণ থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে নিজেদের দখলদারিত্ব ধরে রাখেন তারা। এরকম অভিযোগও ওঠে যে, হাজার হাজার প্রাথমিক সদস্য ফরম গায়েব করে ওয়ার্ড পর্যায়ে এমন সব লোকজনকে ভোটার বানানো হয় যাদের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততাই ছিল না।

পিরোজপুরে জেলা কাউন্সিল সম্পন্ন প্রশ্নে কেন্দ্রীয়ভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয় দলের সহ-বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপুকে। প্রাথমিক সদস্য পদ প্রদান ও কাউন্সিল প্রশ্নে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে বারবার তাকে জানানো হলে তার বিরুদ্ধেও ওঠে কোনো কিছুতে ভ্রুক্ষেপ না করার অভিযোগ। এসব অভিযোগ আর পালটা-পালটি সংঘাতে জেলার মঠবাড়িয়া ও স্বরুপকাঠী উপজেলায় দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে। পছন্দমতো কমিটি করতে ভান্ডারিয়ায় মঞ্চে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রেখে এক গ্রুপ করে উপজেলা সম্মেলন। মঠবাড়িয়ায় ক্ষোভে-রাগে বিএনপি ছেড়ে জামায়াতে যোগ দেন দেড় শতাধিক নেতাকর্মী।

চলমান এসব ঘটনার শেষ পর্যায়ে মঙ্গলবার রাতে পিরোজপুর সদর উপজেলা বিএনপির সম্মেলনস্থলে হামলা চালায় জেলা ছাত্রদলের নেতারা। মঞ্চে থাকা সিনিয়র নেতাদের লাঞ্ছিত করার পাশাপাশি সিল দেওয়া ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নেয় তারা। সদর উপজেলার কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী কামরুজ্জামান চান বলেন, ‘এখানে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লাভলু গাজীর ভাইয়ের ছেলে শুভ্র গাজী। ভোট গণনা শুরু হওয়ার পর যখন দেখা যায় আমি জয়ী হওয়ার পথে ঠিক তখনই অনুগত ছাত্রদল নেতাদের দিয়ে হামলা চালিয়ে নেতাদের মারধর এবং ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেওয়া হয়।’ কামরুজ্জামান চানের এই অভিযোগ অবশ্য স্বীকার করেননি লাভলু গাজী কিংবা তার ভাতিজা শুভ্র। এছাড়া ছাত্রদলের সভাপতি সালাহউদ্দিন কুমারও অস্বীকার করেন এই অভিযোগ। বিএনপির সম্মেলনে ছাত্রদলের এই হামলা ও ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনায় তোলপাড় ওঠে বিএনপিতে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হামলা-ব্যালট ছিনতাইয়ের ভিডিও ভাইরাল হলে ওঠে সমালোচনার ঝড়। এই ঘটনার পর বুধবার সন্ধ্যায় পৃথক দুই চিঠিতে আসে জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত এবং ছাত্রদলের কমিটি স্থগিতের নির্দেশ। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিলুপ্ত ঘোষিত পিরোজপুর জেলা বিএনপির কোনো নেতা। দলের বরিশাল বিভাগীয় কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ‘পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ বহু আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। সংগঠনকে গতিশীল করতে কেন্দ্র এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে ভিন্ন কোনো বিষয় নেই।’

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম