হাওড়ে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে নৌকায় ভাসা আট স্কুল
সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে পাচ্ছে বই-খাতা ড্রেস, টিফিন ও স্বাস্থ্যসেবা
এ টি এম নিজাম, কিশোরগঞ্জ
প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিনামূল্যে বই-খাতা, কলম, জ্যামিতি বক্স, স্কুল ড্রেস, ব্যাগ, জুতা, টিফিন ও স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে হাওড়ে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে নৌকায় ভাসা আটটি স্কুল। সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের বিনোদনে রয়েছে খেলাধুলার আয়োজনও। এমনই সব মানবিক সহযোগিতা নিয়ে কিশোরগঞ্জের নিকলীর ঘোড়াউত্রা নদীপারের দুটি ইউনিয়নের শিশুদের জন্য কার্যক্রম চালাচ্ছে এই স্কুলগুলো। অভিভাবক ও এলাকাবাসীর কাছে এসব স্কুল এখন ‘জলে ভাসা স্কুল’ হিসাবেই পরিচিত।
জানা যায়, ঘোড়াউত্রা নদীপারের অনগ্রসর এই দুটি ইউনিয়নের নাম ছাতিরচর ও সিংপুর। এ দুই ইউনিয়নের অধিকাংশ লোকজন কৃষি ও মৎস্যজীবী। দারিদ্র্যসীমার নিচে তাদের বাস। আর্থিক সংকটের কারণে একসময় অনেক পরিবারের ছেলেমেয়ে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। হাওড়ের এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করতে গিয়ে এমন নাজুক পরিস্থিতি নজরে আসে বেসরকারি সংস্থা পিপলস ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশনের (পপি)। ২০১০ সালের দিকে শুরু করে সংস্থাটি পর্যায়ক্রমে ছাতিরচর ইউনিয়নে চারটি এবং সিংপুর ইউনিয়নে চারটি একতলা ও দ্বিতল নৌকায় ভাসমান স্কুল প্রতিষ্ঠা করে। একই সঙ্গে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণসহ নানা সেবা প্রদানের দায়িত্ব নেয়। ঘাটে ঘাটে ভিড়ে শিক্ষার্থীদের স্কুলে নিয়ে আসার ব্যবস্থাও করে তারা। সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত চলে এসব ভাসমান স্কুলের ক্লাস। লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রতিটি স্কুলে রয়েছে লাইব্রেরি, শিক্ষণীয় ফটো গ্যালারি ও বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন। শিশুদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ ও শিক্ষাগ্রহণে মনোযোগী করে তোলার প্রয়াস। বর্তমানে আটটি ভাসমান স্কুলে ৩০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। ইতোমধ্যেই সাফল্যের সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেছে ১৫শ’র বেশি শিক্ষার্থী। ঘোড়াউত্রা নদীতে ভাসমান স্কুল কার্যক্রম গত রোববার দুপুরে পরিদর্শনকালে মানবিক শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচির এমন চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া গেছে। এ সময় আটটি ভাসমান স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসব স্কুলের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন।
শিক্ষক জাকিয়া আক্তার বলেন, স্কুলের শিক্ষার্থীদের আমরা পরিবারের সদস্যদের মতোই মনে করি। শিক্ষার্থীরাও সেভাবেই গড়ে উঠছে। ছাতির চর গ্রামের অভিভাবক হালিমা বেগম বলেন, আমার স্বামী কৃষি শ্রমিক। অভাব-অনটনে আমাদের জীবন চলে। এই জলেভাসা স্কুল না হলে আমাদের ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারতাম না।
পপির ভাসমান স্কুল প্রকল্পের সমন্বয়কারী জহিরুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যেই ভাসমান স্কুল থেকে ১৫শ’র বেশি শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেছে। তাদের অনেকেই এখন দেশের বিভিন্ন মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছে। ছাতিরচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সত্যি কথা বলতে কী, ভাসমান স্কুলগুলো সুযোগবঞ্চিত অসহায় শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো বিতরণের দূত হিসাবে হাজির হয়েছে। হাওড়ের প্রত্যন্ত এলাকার শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়ানোর এমন অসাধারণ মানবিক উদ্যোগকে তিনি স্বাগত জানিয়েছেন। কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মজিব আলম বলেন, হাওড়ের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য জলেভাসা স্কুল কার্যক্রম নিঃসন্দেহে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তবে এই কার্যক্রমটি উপজেলা ও জেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিচালনা করলে আরও ভালো হবে বলে মনে করেন তিনি।
