Logo
Logo
×

অর্থনীতি

সুবিধাবঞ্চিত তাঁতিদের ভাগ্য সেই তিমিরেই

১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের জাঁতাকলে এ শিল্পটি ধংসের পথে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশের তাঁতিদের জন্ম যেন আজন্ম পাপ। অতীতের সরকারগুলোও তাঁতিদের ওপর সুনজর দেয়নি। বিগত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের জাঁতাকলে এ শিল্পটি ধংসের পথে যেতে থাকে, বন্ধ হয়ে যায় ৬০ ভাগ তাঁত, বেকার হয়ে পড়েন ১৫ লাখ তাঁতি ও তাঁত শ্রমিক। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর তাঁতিরা আশায় বুক বেঁধেছিল যে, এবার বুঝি তাদের ভাগ্য খুলবে। কিন্তু ইউনূস সরকারের গত এক বছরে তাঁতিদের ভাগ্য সেই আগের তিমিরেই রয়ে গেছে। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিক সহযোগিতা ও সুনজর না থাকার কারণে তাঁতশিল্প এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

তাঁতিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে তাঁতিদের মধ্যে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা বিতরণ ও আংশিক শুল্কমুক্ত সুতা রং রাসায়নিক দ্রব্যাদি আমদানি সুবিধা বন্ধ রয়েছে। তাঁত বোর্ডে সূতা, রং ও রাসায়নিক দ্রব্যাদি আমদানি সুপারিশ বন্ধ থাকায় খোলা বাজারে এর দাম এখন দ্বিগুণ হয়েছে। তাঁতিরা খোলা বাজার থেকে দ্বিগুণ দামে সুতা, রং, রাসায়নিক দ্রব্যাদি ক্রয় করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কাপড় তৈরিতে খরচ বেশি পড়ায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছেন না। ফলে অনেক তাঁতি পেশা ত্যাগ করছেন।

তাঁতিরা জানান, এর আগে তাঁতিরা ন্যায্যমূল্যে আংশিক শুল্কমুক্ত সুতা, রং, রাসায়নিক দ্রবাদি পেত। বর্তমানে তা বন্ধ আছে। তাঁত বোর্ডের মাধ্যমে ঋণ সুবিধা বিতরণ ও আংশিক শুল্কমুক্ত সুতা, রং, রাসায়নিক দ্রব্যাদি আমদানির সুযোগ দেওয়া হলে তাঁতশিল্পের উন্নতি ও প্রসার ঘটবে এবং সেখানে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তাঁতশিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সুতা, রং ও রাসায়নিক দ্রব্য (আংশিক শুল্কমুক্ত) আমদানি করা একান্তই প্রয়োজন। তাঁতিতের দাবি, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের অধীনে প্রাথমিক তাঁতি সমিতি রয়েছে ১৩৬০টি, জাতীয় তাঁতি সমিতির মাধ্যমে এই প্রাথমিক তাঁতি সমিতিগুলোকে প্রচলিত আংশিক শুল্কমুক্ত সুতা, রং ও রাসায়নিক দ্রব্য আমদানি করার সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। এছাড়া এই ১৩৬০টি সমিতির সব সদস্যকে তাদের অচল তাঁতগুলো সচল করতে ও যাদের তাঁত আছে পুঁজি নেই তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করতে হবে। শেখ হাসিনা পলায়নের পর থেকে তাঁতিদের কোনো প্রকার ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়নি। গত ২-৩ মাস আগে দুটি প্রাথমিক তাঁতি সমিতিকে (প্রায় ২০ কোটি টাকা) সুতা, রং ও রাসায়নিক দ্রব্য আমদানির সুপারিশ দেওয়া হলেও সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড প্রাথমিক তাঁতি সমিতিটির আমদানি সুপারিশ স্থগিত করা হয় ১৬ জুলাই তারিখে তাঁত বোর্ডের বোর্ড মিটিং থেকে। স্থগিতের কারণ হচ্ছে, এই সমিতির আওতায় আরও ৪০০ জন তাঁতির প্রায় ২ হাজার তাঁত রয়েছে সেগুলোকে সমিতির সদস্যভুক্ত করা হয়নি। কিন্তু সুপারিশ স্থগিত হওয়া সত্ত্বেও তাঁত বোর্ডের ডিজিএমের চক্র চাল খেলায় সিরাজগঞ্জের একটি ব্যাংক শাখায় অবৈধভাবে এলসি খোলা হয়েছে।

এ বিষয়ে তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু আহমদ সিদ্দিকী টেলিফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, এলসি খোলার বিষয়টি স্থগিত করা হয়েছে। আমদানির জন্য এলসি খুলতে তাদের নিষেধ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তাদের চিঠিও দেওয়া হয়েছে। এলসি না খোলার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে, আমদানি রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে, চট্টগ্রাম ও বেনাপোল কাস্টম হাউজকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের ডিজিএম রতন চন্দ সাহা এ প্রতিবেদককে বলেন, সুতা, রং ও রাসায়নিকদ্রব্য আমদানির সুপারিশ দেওয়া হলেও সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড প্রাথমিক তাঁতি সমিতিটির আমদানি সুপারিশ স্থগিত করা হয়। তার পরেও তারা কীভাবে এলসি খুলল এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারব না। এর উত্তর আমাদের জানা নেই। স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও যারা এলসি খুলেছে এ বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবে। সুতা, রং, রাসায়নিক দ্রব্যাদি আমদানি বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে রতন চন্দ সাহা বলেন, সুতা, রং, রাসায়নিক দ্রব্যাদি আমদানি আপাতত বন্ধ রয়েছে। এটা সমাধানের জন্য আমরা কাজ করছি। আমদানি সুপারিশের কার্যক্রম শুরু হলে তাঁতিদের সমস্যা সমাধান হবে বলে আমি মনে করি। তাঁতিদের জন্যই তো তাঁত বোর্ডের সৃষ্টি হয়েছে।

জাতীয় তাঁতি সমিতির সেক্রেটারি ফজলুল হক জানান, পোশাক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড কর্তৃক ইস্যুকৃত সুপারিশ স্থগিত করার পর কোনো অজুহাতেই এলসি খুলতে পারে না। তাঁত বোর্ডকে সংশ্লিষ্ট তফশিলি ব্যাংকে অবশ্যই পত্র প্রেরণ করতে হবে। এছাড়া কাস্টমস হতে মাল খালাস হবে না।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম