Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ

বাজার অর্থনীতিতেও শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ

দেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি এক প্রধান মাথাব্যথার কারণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বরাত দিয়ে শনিবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-মূল্যস্ফীতির হার বর্তমানে ৮.২৯ শতাংশ, যা সাধারণ মানুষের সহনীয় মাত্রা তথা ৩-৪ শতাংশ থেকে প্রায় দ্বিগুণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, দীর্ঘ সময় ধরেই মূল্যস্ফীতির এ অবস্থা বিরাজমান। ২০২২ সালের আগস্টে মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। গত বছরের জুলাইয়ে তা বেড়ে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে ওঠে। এরপর থেকে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানামুখী পদক্ষেপের ফলে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমলেও তা সহনীয় মাত্রার দ্বিগুণেরও বেশি। এ অবস্থায় উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তিনটি প্রধান চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে : ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করা। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করাই এখন তাদের অর্থনীতির প্রধান লক্ষ্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আশা, এগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকলে মূল্যস্ফীতির হারও প্রত্যাশিত মাত্রায় নেমে আসবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়, সন্দেহ নেই। ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা অত্যন্ত জরুরি। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই ডলারের প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। এতে আমদানি ব্যয় সামাল দেওয়া অনেকাংশে সহজ হবে, সেই সঙ্গে টাকার ওপর চাপও কমবে। ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি আসবে, বৃদ্ধি পাবে কর্মসংস্থান। তবে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা আরও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি আমরা। একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে এবং সামগ্রিক অর্থনীতিকে মজবুত করার ক্ষেত্রে অপরিহার্য। কারণ, রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করে, যার ফলে ডলারের প্রবাহ কমে যায় এবং বিনিময় হার ঝুঁকির মুখে পড়ে।

তবে, কেবল মেক্রো ইকোনমিক নীতি দিয়ে এ সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান সম্ভব নয়। মূল্যস্ফীতির আরেকটি বড় কারণ হলো বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি ও সিন্ডিকেট। যখন ভরা মৌসুমেও চালসহ নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে, তখন স্পষ্ট বোঝা যায়, বাজার ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের দুর্বলতা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগও আছে, বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের যোগসাজশ রয়েছে; ফলে যারা কারসাজি করে থাকেন, তারা পার পেয়ে যান। কাজেই কেবল জরিমানা করে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়; প্রয়োজন কঠোর আইনি পদক্ষেপ।

সর্বোপরি, সরকারকে বাজার অর্থনীতির মূল সমস্যাগুলোয় সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে হবে। উৎপাদন পর্যায় থেকে শুরু করে ভোক্তার কাছে পণ্য পৌঁছানো পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে নজরদারি বাড়াতে হবে। ব্যাপারি, ফড়িয়া, আড়তদার-সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। মূল জায়গায় ব্যবস্থা না নিলে অন্য কোনো পদক্ষেপই যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সফল হবে না, তা বলাই বাহুল্য। দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই চক্র ভাঙা তাই অত্যন্ত জরুরি। মোটকথা, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তার মুদ্রানীতি কার্যকরভাবে প্রয়োগের পাশাপাশি সরকারকেও বাজার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। জনগণকে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হলে এ দুই ক্ষেত্রেই কঠোর ও সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য। বাজারে প্রকৃত তদারকির মাধ্যমে সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হবে, এটাই প্রত্যাশা।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম