Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

ডিএসসিসির কাজে দুর্নীতি : তদন্ত শেষে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ডিএসসিসির কাজে দুর্নীতি : তদন্ত শেষে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে

ফাইল ছবি

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে জনগণের শত শত কোটি টাকা লোপাটের যে অভিযোগ উঠেছে, তা উদ্বেগজনক। গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে যে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে, তা আমাদের নগর প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রশ্নটিকে আরও একবার সামনে নিয়ে এসেছে। শেখ ফজলে নূর তাপসের আশীর্বাদে আটটি কাজে অন্তত ৫৭৭ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, কাজ না করে বিল পরিশোধ, যোগসাজশ করে প্রাক্কলিত দর বাড়ানো, পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেওয়াসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। এ ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সিটি করপোরেশন জনগণের অর্থে পরিচালিত একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। নগরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য যে বিশাল বাজেট বরাদ্দ হয়, তা প্রত্যেক নাগরিকের কষ্টের উপার্জনের অংশ। সেই অর্থ যদি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদে নয়ছয় হয়ে যায়, তবে তা জনআস্থার প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা। সুনির্দিষ্ট আটটি কাজে ৫৭৭ কোটি টাকা লোপাট হওয়ার বিষয়টি স্পষ্টতই ইঙ্গিত দেয় যে, ডিএসসিসিতে একটি পরিকল্পিত উপায়ে দুর্নীতির জাল বিস্তার করা হয়েছিল। এ ধরনের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ প্রমাণ করে, সাধারণ নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেওয়া এবং সরকারি তহবিল নয়ছয় করার একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করেছে। একজন সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণ করে, রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে।

দুদক ইতোমধ্যেই সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে। তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ এবং বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করাও হয়েছে। এসব আইনি পদক্ষেপ প্রমাণ করে, অভিযোগের ভিত্তি অত্যন্ত গুরুতর। এখন প্রয়োজন এই মামলাগুলোর দ্রুত ও স্বচ্ছ বিচার নিশ্চিত করা।

দুর্নীতি আমাদের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। ৫৭৭ কোটি টাকা সামান্য অঙ্ক নয়। এ টাকা দিয়ে নগরীর অনেক জনকল্যাণমূলক কাজ করা যেত। কিছু ব্যক্তির লোভের কারণে সেই সুযোগগুলো থেকে নগরবাসী বঞ্চিত হলো। এ ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। শুধু আইনি ব্যবস্থা নয়, একইসঙ্গে সিটি করপোরেশনসহ সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে বিল পরিশোধ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে কঠোর নজরদারি এবং ডিজিটাল ট্র্যাকিং পদ্ধতি চালু করা প্রয়োজন। যিনিই জনপ্রতিনিধি হিসাবে আসবেন, তাকে তার ক্ষমতা ও সম্পদের হিসাব দিতে হবে।

আমরা আশা করি, দুদকের অনুসন্ধান শেষে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তি যত প্রভাবশালীই হোন না কেন, তাকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। জনগণের টাকা যারা লোপাট করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই পারে ভবিষ্যতে এমন অর্থ আত্মসাতের প্রবণতা রোধ করতে এবং জনগণের হারানো আস্থা পুনরুদ্ধার করতে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম