বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিং ও বাংলাদেশ : শিক্ষার মান ও গবেষণায় জোর দেওয়া জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণাবিষয়ক প্রকাশনা কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাংকিংয়ে এশিয়ার সেরা ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় নেই বাংলাদেশের কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ বছরের অর্থাৎ ২০২৬ সালের কিউএস গ্লোবাল র্যাংকিং মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে আমাদের দেশের গবেষকদের পিছিয়ে থাকার বিষয়টি হতাশাজনক। এ অবস্থার উত্তরণে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। বস্তুত সারা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্তর্জাতিক মান ও মূল্যায়নে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিবছর র্যাংকিং প্রকাশ করে। এসব র্যাংকিংয়ের মানদণ্ডে পার্থক্য থাকলেও মূল সূচকগুলো মৌলিকভাবে প্রায় একইরকম। কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাংকিংয়ে নয়টি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়-প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি, নিয়োগকর্তাদের খ্যাতি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, শিক্ষকপ্রতি গবেষণা প্রবন্ধের সাইটেশন, বিদেশি শিক্ষকের সংখ্যা, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা, আন্তর্জাতিক গবেষণা নেটওয়ার্ক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাফল্য এবং সাসটেইনেবিলিটি।
বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে কোনো দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান সেদেশের উচ্চশিক্ষার ভাবমূর্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি বাড়াতে মৌলিক জ্ঞান সৃষ্টির বিকল্প নেই। এর জন্য দরকার গবেষণায় গুরুত্ব বাড়ানো। দেশের কোনো কোনো গবেষকের অভিযোগ-উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় শিক্ষকদের মাঝে গবেষণায় আগ্রহ কম। কোনো কোনো গবেষক মনে করেন, অনেক ক্ষেত্রে উৎসাহ দেওয়ার মতো একাডেমিক নেতৃত্বদানকারী শিক্ষকেরও সংকট রয়েছে। আমরা মনে করি, শিক্ষক-গবেষকদেরই উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে এবং বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়লেও মৌলিক জ্ঞান সৃষ্টিতে আমরা কেন পিছিয়ে আছি, তা চিহ্নিত করে সমস্যার সমাধানে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। গবেষণা বাবদ বরাদ্দ বৃদ্ধি করে আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবরেটরি এবং সমৃদ্ধ লাইব্রেরি স্থাপন করা হলে আশা করা যায়, মৌলিক গবেষণায় শিক্ষক-গবেষকদের আগ্রহ বাড়বে। মেধাবীরা যাতে শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহী হন সেজন্যও পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে মৌলিক গবেষণায় আগ্রহী হয়, সেজন্য স্কুল পর্যায় থেকেই তাদের উৎসাহ প্রদান করতে হবে। কাঙ্ক্ষিত সুফল পেতে হলে শিক্ষা প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে; রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, মৌলিক জ্ঞান সৃষ্টিতে আমরা পিছিয়ে পড়লে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশে নানামুখী সংকট সৃষ্টি হবে। কাজেই দেশে শিক্ষার মান বাড়াতে যা যা করণীয়, সবই করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবাই দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দিলে গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হলেও কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলবে না।
