পানিবন্দি জনপদ
শতাব্দীপ্রাচীন দৃশ্যগুলো আড়ালে থাকছে কেন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পিরোজপুর জেলা শহরের উত্তরের সন্নিকটে অবস্থিত নাজিরপুরকে একটি ছোট্ট দ্বীপ বলা চলে। অসংখ্য নদী-নালা-খাল-বিলে ঘেরা এই জনপদটি এমনভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে যে, এখান থেকে বের হওয়ার কোনো সড়ক নেই। কিছু জায়গায় কাঠ অথবা বাঁশের সাঁকো আছে বটে; কিন্তু সেগুলো ভাঙাচোরা বলা যায়।
এ জনপদের শিক্ষার্থী ও জনসাধারণের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ডিঙ্গি নৌকা ও ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত ট্রলার। ঝড়-বৃষ্টি হলে কিংবা প্রখর রোদের সময় ছাতা মাথায় দিয়ে শিক্ষার্থীদের যেতে হয় স্কুলে। এ নিয়তি এতই নিয়মিত যে, অধিকাংশ বাড়ির ঘাটেই নিজস্ব মালিকানায় চলাচলের জন্য প্রস্তুত থাকে নৌকা অথবা ট্রলার। বিভিন্ন হাট-বাজার ও দূর-দূরান্তে যাওয়ার জন্য ভাড়ায়চালিত মাঝারি ট্রলারও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সবচেয়ে দুর্দশায় রয়েছেন দেউলবাড়ি দেবড়া ইউনিয়নের অধিবাসীরা। বর্ষা মৌসুমে তাদের দুর্দশার সীমা থাকে না। তাদের নিয়তি হলো-খালই রাস্তা, নৌকাই বাহন। শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের অবস্থা যাচ্ছেতাই। কখনো কখনো বই-খাতা আর স্কুল-ড্রেস ভিজে যায় বৃষ্টিতে। রয়েছে পানিতে পড়ে যাওয়ার ভয়। সব সংকট পেরিয়ে কখনো কখনো নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে যেতে পারে না তারা।
পিরোজপুর এলাকার জনসাধারণকে এই প্রতিকূল পরিবেশ থেকে মুক্ত করতে হবে। বছরের পর বছর একটি এলাকার মানুষ এতটা প্রতিকূল পরিবেশে বাস করতে পারে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অবশ্য বলেছেন, যদি সরকারিভাবে প্রকল্প নেওয়ার সুযোগ থাকে, তাহলে অবশ্যই বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তা-ব্রিজ নির্মাণের চেষ্টা নেওয়া হবে। আমাদের কথা হলো, এত দীর্ঘকাল পর কেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এই আশ্বাস দিতে হবে? এলাকাটি বাংলাদেশের ভূখণ্ডেই অবস্থিত। যুগ যুগ ধরে এ এলাকা কর্তৃপক্ষের চোখে পড়ল না কেন? আমরা তো দেশে সুষম উন্নয়ন চাই। কোনো এলাকায় উন্নয়নের জোয়ার বইবে আর অন্য একটি এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়াও লাগবে না, এটা হতে পারে না। আমরা শুধু স্থানীয় প্রশাসন নয়, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। দীর্ঘদিনের এই যন্ত্রণার ইতি ঘটাতে হবে। আলোচ্য এলাকার জনসাধারণকে দিতে হবে নির্বিঘ্ন, নিরাপদ জীবন।
