নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি
অপরাধী গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধার অভিযান সফল হোক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। এর অংশ হিসাবে জোরদার করা হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান। সেই সঙ্গে নাশকতাকারী, অস্ত্রধারীসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করা হয়েছে। বস্তুত একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য এ ধরনের কঠোর পদক্ষেপ কেবল জরুরি নয়, এটি নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব। এক কথায়, এসব পদক্ষেপ শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের অপরিহার্য শর্ত।
অবৈধ অস্ত্র যে কোনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য মারাত্মক হুমকি। এই অস্ত্রগুলো যে কেবল নির্বাচনি সহিংসতা বা ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য ব্যবহৃত হয় তা নয়, বরং এগুলো সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা এবং ভোটের পরিবেশকেও দূষিত করে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা, ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া, এমনকি নির্বাচনি ফলাফলকে প্রভাবিত করার মতো গুরুতর অপরাধে এই অস্ত্রগুলোর ব্যবহার উদ্বেগজনক। যখন ভোটারদের মনে এই ভয় কাজ করে যে, নির্বাচন সহিংস হতে পারে, স্বভাবতই তখন ভোটদানের হার কমে যায়।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনের অবসান হওয়া মাত্রই থানা, ফাঁড়ি, পুলিশ বক্সসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে এবং একইসঙ্গে লুট হয় বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ। এসব অস্ত্রের উল্লেখযোগ্য অংশ এখনো উদ্ধার হয়নি। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, যারা অস্ত্র লুট করেছে, তারা সাধারণ মানুষ নয়, বেশির ভাগই সন্ত্রাসী, উগ্রপন্থি, চরমপন্থি ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। এদের অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। লুট হওয়া অস্ত্র দিয়ে তারা নানা অপরাধ ঘটিয়ে চলেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে তারা প্রভাবশালীদের পক্ষে ভাড়ায় খাটবে। সংঘাত-সহিংসতার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে তৎপর হবে। অনেকে আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নেও মাঠে নামতে পারে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে গোয়েন্দারা যেসব ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ দেখছেন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-উদ্ধার না হওয়া লুণ্ঠিত অস্ত্র, চরমপন্থি ও পার্বত্য এলাকার সশস্ত্র গোষ্ঠী, জামিনপ্রাপ্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। কাজেই লুট করা অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারলে আগামীতে সমাজে অপরাধ তো বাড়বেই, রাজনৈতিক সহিংসতাও ঘটতে পারে।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বর্তমান অভিযান নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। তবে এ অভিযানকে কেবল নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তের কাজ হিসাবে পরিচালনা করলে চলবে না। এ প্রক্রিয়াটি হতে হবে সুসংগঠিত, নিরপেক্ষ ও নিরবচ্ছিন্ন। এই অভিযান যেন কেবল ভোটের আনুষ্ঠানিকতা না হয়ে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ভিত্তি স্থাপন করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতা এবং জনগণের সচেতনতাই পারে এ অভিযানকে সফল করতে এবং গণতন্ত্রের পথকে মসৃণ করতে। তবে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না, সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে এমন পরিবেশ গড়ার চেষ্টা করতে হবে, যেখানে নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়া সম্ভব হবে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হতে না পারলে দেশ মহাসংকটে পড়বে, এ আশঙ্কা মাথায় রেখেই দেশের নাগরিক সমাজকে বড় দায়িত্ব পালন করতে হবে।
