নির্বাচনে ঋণখেলাপি ঠেকানো, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ পদক্ষেপের বাস্তবায়ন চাই
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঋণখেলাপিদের প্রার্থী হওয়া ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রস্তুতি নিঃসন্দেহে একটি সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য এ উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি। অতীতে দেখা গেছে, বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের বোঝা নিয়ে অনেকে নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে এসেছেন, যা সুশাসন ও আর্থিক শৃঙ্খলার পথে বড় বাধা সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কড়াকড়ি আরোপের প্রচেষ্টা দেশের ব্যাংক খাতকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে বলে আশা করা যায়।
দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে (৩০ সেপ্টেম্বর) দেশের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের স্থিতি ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকায় ঠেকেছে, যা বিতরণকৃত ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। বলার অপেক্ষা রাখে না, এর একটি বড় অংশ রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বা প্রভাব খাটিয়ে নেওয়া ঋণ, যা নির্দিষ্ট সময়ে ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। যখন একজন ঋণখেলাপি জনপ্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত হন, তখন তিনি ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রভাব খাটানোর সুযোগ পান এবং তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এতে সাধারণ আমানতকারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় এবং ব্যাংক ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কমে যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগটি মূলত এই দুষ্টচক্র ভাঙার প্রচেষ্টা। জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ঠেকাতে বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে। এর পাশাপাশি সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম-ঠিকানাসহ পূর্ণাঙ্গ পরিচিতি সংগ্রহ করে তাদের নামে-বেনামে বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো ধরনের খেলাপি ঋণ আছে কিনা, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। আমরা মনে করি, এসব ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমন্বয়ের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তালিকা প্রদান এবং যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়াটি যেন দ্রুত ও ত্রুটিমুক্ত হয়, তা নিশ্চিত করা জরুরি। তাছাড়া এ পদক্ষেপ বাস্তবায়নের একটি চ্যালেঞ্জ হলো, ঋণখেলাপিদের একটি অংশ নির্বাচনের ঠিক আগে প্রভাব খাটিয়ে ঋণ নিয়মিত করার চেষ্টা করতে পারে। এ ধরনের অপতৎপরতা রোধে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।
ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ ঠেকানো শুধু একটি আইনি প্রক্রিয়া নয়, বরং সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এটি অপরিহার্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ কঠোরতা কেবল ঋণখেলাপিদের প্রার্থী হওয়া ঠেকাতে নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গঠনেও সহায়ক হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আমরা আশা করব, তারা শেষ পর্যন্ত এই পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ব্যাপারে অটল থাকবেন। কোনো ধরনের রাজনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন না। মনে রাখতে হবে, ঋণ ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপ করা দুর্নীতিবাজদের এক ধরনের সংস্কৃতি হয়ে পড়েছে। আর আসন্ন নির্বাচনে দুর্নীতিবাজদের নির্বাচিত না করার আহ্বান জানিয়েছেন স্বয়ং দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন। সেক্ষেত্রে ঋণখেলাপিদের প্রতিরোধের দায়িত্ব রয়েছে ভোটারদেরও।
