Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

গভীর সংকটে বস্ত্রশিল্প

নীতিগত সুরক্ষার বিকল্প নেই

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গভীর সংকটে বস্ত্রশিল্প

ফাইল ছবি

দেশের অর্থনীতিতে পোশাক খাতের মেরুদণ্ড হিসাবে পরিচিত বস্ত্রশিল্প সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ শিল্পের ভুক্তভোগীরা বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তারা জানিয়েছেন, কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার ও জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ইতোমধ্যেই প্রায় ৪০ ভাগ কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অবশিষ্ট কারখানাগুলোও চলছে ধুঁকে ধুঁকে, উৎপাদন ক্ষমতা নেমে এসেছে অর্ধেকের নিচে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের নীতিসহায়তা ছাড়া এ শিল্পের পতন ঠেকানো কঠিন বলে জানিয়েছেন তারা। এদিকে স্পিনিং মিলমালিকদের মূল অভিযোগ নীতিগত দুর্বলতা ঘিরে। একসময়ের ২৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা নামিয়ে আনা হয়েছে মাত্র দেড় শতাংশে, যা কার্যত এ শিল্পকে আরও দুর্বল করেছে। কম দামে বিদেশি সুতা দেশে প্রবেশ করে দেশীয় বাজার দখল করে নিচ্ছে।

এ সংকটের আরেকটি বড় দিক হলো স্থানীয় গার্মেন্ট মালিকদের একাংশের বিদেশি সুতা আমদানির প্রবণতা। যেখানে টেক্সটাইল শিল্প গার্মেন্ট খাতের কাঁচামালের প্রায় সিংহভাগ সরবরাহ করতে সক্ষম, সেখানে এমন প্রবণতা দেশীয় সুতার বাজারকে সংকুচিত করছে। ফলে একদিকে দেশীয় শিল্প ধ্বংস হচ্ছে, অন্যদিকে দেশের ভেতরেই একটি শক্তিশালী ভ্যালু চেইন গড়ে তোলার সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আজ স্পিনিং মিল বন্ধ হলে ভবিষ্যতে গার্মেন্ট মালিকদেরই উচ্চমূল্যে বিদেশি সুতা কিনতে বাধ্য হতে হবে। এর সামাজিক প্রভাবও সুদূরপ্রসারী-বেকার শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে।

এ শিল্পকে বাঁচানোর জন্য তাই জরুরি ভিত্তিতে নীতিসহায়তা অপরিহার্য বলে মনে করি আমরা। স্পিনিং মিলমালিকদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত দাবিগুলো, যেমন-স্থানীয় সুতা ব্যবহারে ১০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা প্রদান, সুতা আমদানিতে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক বা সেফগার্ড ডিউটি আরোপ এবং গ্যাস-বিদ্যুৎ বিলে ৩০ শতাংশ ছাড় প্রদান-এসব বিষয়ে সরকারের বিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের কাঁচামালের একটি নির্দিষ্ট অংশ স্থানীয় উৎস থেকে কেনার বাধ্যবাধকতা আরোপ করারও প্রয়োজন রয়েছে। সরকারকে বুঝতে হবে, বস্ত্রশিল্পের সুরক্ষা নিশ্চিত করা মানে কেবল কয়েকটি কারখানা বাঁচানো নয়, বরং দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত এবং লাখ লাখ শ্রমিকের জীবনযাত্রার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অন্যথায় আগামীতে টেক্সটাইল, অতঃপর গার্মেন্ট-উভয় শিল্পই গভীর সংকটে পড়বে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম