Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

খেলাপি ঋণের বিস্তার

দুর্নীতি ও বিচারহীনতার অবসান ঘটাতে হবে

Icon

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০১৮, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

খেলাপি ঋণের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না ব্যাংকিং খাত। দুশ্চিন্তার বিষয় হল, খেলাপি ঋণের পরিমাণ ক্রমাগত বাড়তে থাকায় বর্তমানে ব্যাংকগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে। মূলত ব্যাপক দুর্নীতি, ঋণ বিতরণে রাজনৈতিক প্রভাব, সুশাসনের অভাব এবং সরকারি ব্যাংকগুলোর ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ অনেকটা শিথিল হওয়ার কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালকরা নিজেদের মধ্যে ঋণ ভাগাভাগি করার কারণে সেখানেও খেলাপির সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। এর সঙ্গে অবলোপনকৃত ঋণ, যার পরিমাণ প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা যোগ করলে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে কমপক্ষে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এ চিত্র দেশের ব্যাংকিং খাত, ব্যবসা-বাণিজ্য, সর্বোপরি অর্থনীতির জন্য একটি সতর্কবার্তা।

খেলাপি ঋণ না কমে বরং দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়া। এছাড়া যাচাই-বাছাই ছাড়া প্রদেয় নতুন ঋণও খেলাপির পাল্লা ভারি করছে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ঋণ যাতে কুঋণে পরিণত না হয়, সে ব্যাপারে ব্যাংকগুলোর সতর্ক হওয়া জরুরি। সেই সঙ্গে ব্যাংকিং খাতে অসৎ কর্মকর্তাদের দাপট ও আধিপত্য রোধের বিষয়েও নজর দেয়া উচিত। দেখা গেছে, অসৎ ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি খেলাপি ঋণের প্রসার ঘটায়। মিথ্যা তথ্য ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নেয়ার পর তা খেলাপিতে পরিণত করার প্রবণতা শুরুতেই রোধ করা গেলে ব্যাংকগুলোর পক্ষে ঝুঁকি এড়ানো সহজ হবে। পরিতাপের বিষয় হল, ব্যাংকিং খাতে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার বিষয়টি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করা হয়নি, যার অন্যতম উদাহরণ সোনালী ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা। বস্তুত ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করার প্রবণতা এক ধরনের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে সমাজে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় জবাবদিহিতার পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করা গেলে খেলাপি ঋণসহ অন্যান্য অনিয়ম হ্রাস পাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, খেলাপি ঋণের বিস্তার ব্যাংকগুলোকে দুর্বল করছে। এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য আইএমএফ ব্যাংকগুলোর ওপর তদারকি ও নজরদারি বৃদ্ধির তাগিদ দিয়েছে। অর্থমন্ত্রীও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, খেলাপি ঋণ হচ্ছে ব্যাংকিং খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। দেখা গেছে, কোনো নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে রাজনৈতিক দলের নেতা এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সরাসরি হস্তক্ষেপে এসব ঋণ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে খেলাপি ঋণ আদায়ের পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। বস্তুত শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা না গেলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়তেই থাকবে। এর ফলে ব্যাংকিং খাতে মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। দেশে ব্যাংকিং খাতের পরিধি ক্রমেই বাড়ছে। এ অবস্থায় প্রধান কাজ হচ্ছে মানুষের আস্থা অর্জন। তা না হলে অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চারের কাজটি মারাত্মভাবে ব্যাহত হবে। এজন্য সর্বাগ্রে অনিয়ম ও দুর্নীতিমুুক্ত ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান ঘটিয়ে খেলাপি ঋণের বিস্তার রোধ এবং অনাদায়ী ঋণ আদায়ে সরকার কঠোর হবে, এটাই প্রত্যাশা।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম