ওসমান হাদির শাহাদত
বিপন্ন গণতন্ত্রের অশনিসংকেত
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশ আজ এক গভীর ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। একদিকে একটি ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন শুরুর প্রত্যাশা, অন্যদিকে সেই প্রত্যাশার অন্যতম কারিগরের শাহাদত ও রাজপথে বিশৃঙ্খলা। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং তরুণ রাজনীতিক শরিফ ওসমান হাদির নির্মম মৃত্যু ও তার ওপর সংঘটিত হামলার ঘটনা কেবল একজন ব্যক্তি বা নেতার প্রস্থান নয়, বরং এটি আমাদের আগামীর গণতান্ত্রিক স্বপ্নের ওপর এক বড় আঘাত। ওসমান হাদির মৃত্যুতে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
ওসমান হাদি ছিলেন সেই প্রজন্মের প্রতিনিধি, যারা রাজপথে বুক চিতিয়ে সত্য উচ্চারণের সাহস দেখিয়েছিলেন। একজন শিক্ষিত, মার্জিত ও স্পষ্টভাষী তরুণ হিসাবে তিনি রাজনীতির প্রথাগত ধারা বদলানোর স্বপ্ন দেখতেন। ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে তার নির্বাচনে নামার ঘোষণাটি ছিল তারুণ্যের সেই সাহসেরই প্রতীক। কিন্তু গুলিবিদ্ধ হয়ে তার এই প্রস্থান বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে শূন্যতা তৈরি করল, তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। আমরা দাবি জানাই, এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ওসমান হাদির মৃত্যু যখন আমাদের শোকাতুর করেছে, ঠিক তখনই দেশের রাজপথের পরিস্থিতি ভিন্ন এক আশঙ্কার জন্ম দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংবাদপত্রের অফিসসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বলা বাহুল্য, গণমাধ্যমের ওপর এ ধরনের হামলা বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের মূলস্তম্ভকে দুর্বল করে দেয়। যে কোনো মতপার্থক্য থাকতে পারে; কিন্তু তার সমাধান কখনোই সহিংসতা বা আগুন দেওয়া হতে পারে না। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ও নিন্দনীয় কর্মকাণ্ড দেশের স্থিতিশীলতাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশের মানুষ দীর্ঘদিনের অচলায়তন ভেঙে একটি স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। কিন্তু এই মুহূর্তে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, হত্যাকাণ্ড এবং হামলার ঘটনাগুলো আসন্ন নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার এক গভীর চক্রান্ত বলে প্রতীয়মান হয়। এই অরাজক পরিস্থিতি চলতে থাকলে জনমনে ভীতি সঞ্চার হবে, যা সুস্থ নির্বাচনি পরিবেশের পরিপন্থি।
শরিফ ওসমান হাদির অকাল মৃত্যু আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। আমরা যদি এখনই আইনের শাসন এবং সহনশীলতার পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারি, তবে গণ-অভ্যুত্থানের অর্জনগুলো ধূলিসাৎ হয়ে যেতে পারে। সরকারকে কঠোর হস্তে বিশৃঙ্খলা দমন করতে হবে ও সব রাজনৈতিক পক্ষকে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। হাদির রুহের মাগফিরাত কামনার পাশাপাশি আমরা আশা করি, কোনো অপশক্তিই আমাদের আগামীর নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক যাত্রাকে ব্যাহত করতে পারবে না।
