Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

দরকার স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা

যথাসময়ে নির্বাচনের বিকল্প নেই

Icon

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং আসন্ন নির্বাচন নিয়ে জনমনে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে যে ক্ষোভ ও অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হয়েছে, তা কেবল দুঃখজনকই নয় বরং গণতন্ত্রের পথে এ এক বড় অন্তরায়। শনিবার যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) তফসিলে ঘোষিত সময়ে ভোটগ্রহণে যে অনড় অবস্থান ব্যক্ত করেছে, তা সময়োপযোগী তো বটেই, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্যও জরুরি। তবে এই নির্বাচনকে সার্থক করতে হলে প্রথম এবং প্রধান শর্ত হলো-আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান ও টেকসই উন্নতি। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো পরিস্থিতির উন্নয়নে নতুন কৌশল গ্রহণ করছে। এটি আশাব্যঞ্জক এজন্য যে, সরকার ও নির্বাচন কমিশন উদ্ভূত নাজুক পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার বিষয়ে আশাবাদী। বিশেষ করে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশসহ সব গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের নিয়ে ইসির জরুরি বৈঠক করার সিদ্ধান্তটি একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। জনগণের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে যে সংশয় বা ‘কানাঘুষা’ চলছে, তা দূর করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সরাসরি বার্তা এবং মাঠপর্যায়ে কঠোর অবস্থান নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন।

মনে রাখা দরকার, একটি দেশে যখন মব ভায়োলেন্স, লুটপাট বা গুপ্তহত্যার মতো ঘটনা ঘটে, তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়। শরিফ ওসমান হাদির মতো একজন ব্যক্তিত্বকে দিনদুপুরে গুলি করে হত্যার পর ঘাতকের নিরাপদে দেশত্যাগ করার ঘটনা স্বভাবতই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, তা নিরসনে সরকার ও ইসির দ্বিমুখী ভূমিকা পালন করতে হবে। একদিকে যেমন উগ্র গোষ্ঠীর সহিংসতা কঠোর হাতে দমন করতে হবে, অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কার্যকর সংলাপ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে রাজপথের স্থিতিশীলতাও বজায় রাখতে হবে।

আশার কথা, নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণের যে তারিখ নির্ধারিত হয়েছে, সেটিকে কেন্দ্র করেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। কারণ, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী এই নির্বাচন দেশের ভবিষ্যৎ পুনর্গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে, অস্থিতিশীল পরিবেশে কখনোই একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন এবং প্রার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে প্রচার চালাতে পারেন, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।

বলার অপেক্ষা রাখে না, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সচল রাখতে হলে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই; কিন্তু সেই নির্বাচন হতে হবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে কোনো মহল যাতে ফায়দা লুটতে না পারে, সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর দিতে হবে। আমরা আশা করি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নতুন কৌশল কেবল কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং মাঠপর্যায়ে এর প্রতিফলন ঘটবে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং একটি সুন্দর নির্বাচনি পরিবেশ তৈরি করে সরকার ও ইসি দেশকে একটি সফল নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাবে-এটাই প্রত্যাশা।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম