পানির দরে সবজি
কৃষক পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না কেন?
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। আলুর ক্ষেত্রে সংকট আরও গভীর। রাজশাহীতে উঠতে শুরু করেছে নতুন আলু। আড়তদার ও পাইকারি আলু ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুরোনো আলু কেউ কিনছেন না। ওদিকে রাজশাহীর ৩৯টি হিমাগারে এখনো মজুত রয়েছে ৪৫ হাজার টন পুরোনো আলু। যেসব ব্যবসায়ী ও চাষি বেশি দামের আশায় হিমাগারে আলু রাখেন, তারা এখন আর নতুন আলু রাখতে হিমাগারে যাচ্ছেন না। তারা হিমাগারে সংরক্ষিত আলু তুলছেনও না। ফলে বিপাকে পড়েছেন হিমাগার মালিকরা। এদিকে নতুন আলু ওঠার সময় দাম কিছুটা বেশি থাকলেও, বর্তমানে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আলু। পুরোনো আলুর দাম ৮ থেকে ৯ টাকা। হিমাগারের মালিকরা আলু ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য মাইকিং পর্যন্ত করছেন; কিন্তু চাষি বা ব্যবসায়ী কেউ কোনো ডাকে সাড়া দিচ্ছেন না।
শাকসবজির ক্ষেত্রে কৃষকের অবস্থা আরও কাহিল। কাঁচা শাকসবজির বগুড়া জেলার সর্ববৃহৎ মহাস্থান হাট শীতকালে সবজিতে সয়লাব হয়ে থাকে। দূর-দূরান্ত থেকে কৃষক তাদের সবজি নিয়ে এই হাটে আসেন বটে, কিন্তু তারা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। ফলে শীতকালীন এই সবজির বাজারে কৃষক লোকসান গুনছেন। চাহিদার তুলনায় আমদানি অনেক বেশি, কিন্তু ক্রেতা নেই। আর তাই বাধ্য হয়ে বিক্রেতারা কম দামে বিক্রি করছেন সবজি। এই দরপতন কৃষককে ফেলেছে মহাবিপদে। মহাস্থান হাটে দুই সপ্তাহ আগেও যে ফুলকপি বিক্রি হয়েছিল মনপ্রতি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায়, সেই কপি এখন বিক্রি হচ্ছে মনপ্রতি ৯০ থেকে ১২০ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে মুলা বিক্রি হয়েছিল ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায়, এখন মূল্য নেমে এসেছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়। এভাবে পাতাকপি, শিম, করলা, পেঁয়াজ, মিষ্টি লাউ, এসব কৃষিপণ্যের দাম কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।
আলু ও সবজির দরপতন নিঃসন্দেহে কৃষক সমাজের জন্য এক বড় বিপদ। উৎপাদন খরচ মিটিয়ে তারা যদি লাভবান হতে না পারেন, তাহলে এই উৎপাদনের তাৎপর্য কী? কৃষকের জীবন ধারণের একমাত্র অবলম্বন কৃষিজাতপণ্য। তারা উৎপাদনের খরচ মিটিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে সেই টাকায় সংসার চালান, এটাই রীতি। অথচ বাড়তি টাকার মুখ তো দেখছেনই না তারা, উপরন্তু উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না। হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, বগুড়ায় ফুলকপির বিক্রয় মূল্য কেজিতে দুই টাকা। এটা কোনো কথা হতে পারে না। এই হিসাবে ফুলকপি চাষিরা কীভাবে তাদের সংসার চালাবেন? হিমাগারে রক্ষিত বিশাল পরিমাণ আলুর গতিই বা হবে কীভাবে? সবজির বাজারে এই সংকট নিয়ে ভাবতে হবে কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। সমস্যা ঠিক কোথায়, তা চিহ্নিত করতে হবে। কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবেন, আবার বাজারদর ক্রেতাদের সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। এই ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে অবশ্যই।
