নিরপেক্ষতা শুধু নীতিকথা নয়
মোহাম্মদ আবু নোমান
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০১৮, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতীকী ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নির্বাচন এলেই ‘নিরপেক্ষতা’ নামক নীতিকথা সর্বত্রই আলোচিত ও চর্চিত হয়ে থাকে। দেশের রাজনীতিক ও সুশীলদের মধ্যে ‘সুষ্ঠু’, ‘নিরপেক্ষ’, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’- এই শব্দগুলোর প্রয়োগ ও ব্যবহার বেড়ে যায়।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন বলতে কিছু না থাকলেও যখন যারা ক্ষমতায় থাকেন তাদের দৃষ্টিতে নির্বাচন সবসময় সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ বলে মনে হয়।
আবার যারা পরাজিত হন তারা এর বিপক্ষে অবস্থান নেন। কাজেই দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনের প্রাক্কালে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতার সংজ্ঞা আপেক্ষিক। ‘বনে যে যায়, সেই বাঘ হয়’! নীতি চর্চায় অভ্যস্ত আমাদের বহুমুখী রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ।
ক্ষমতার লোভে মানবিকতা, দেশপ্রেম, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষতা ইত্যাদি রাজনৈতিক দলের ভেতর থেকে হারিয়েই গেছে। অতীতে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে ক্ষমতাসীনরা বলেছিলেন, ‘পাগল ও শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়’! অর্থাৎ, নিরপেক্ষতা একমাত্র শিশু ও পাগলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, অন্য কোনো ক্ষেত্রে নয়।
নিরপেক্ষ মানে পক্ষপাতিত্বহীন, ন্যায়পরায়ণ বা পক্ষপাতশূন্য। আসলে আমরা কেউ কোনো বিষয়ে নিরপেক্ষ নই। কারও পক্ষে সম্ভবও নয় নিরপেক্ষ থাকা। এমনকি ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনেও নিরপেক্ষ থাকা সম্ভব নয়।
রাজনৈতিকভাবে তো নয়ই। যখন ভোট দেয়া হয় তখন নিরপেক্ষ বলে কোনো ব্যালট থাকে না। তার মানে, প্রত্যেক মানুষই কোনো না কোনো মত ও পথের অনুসারী।
একজন রাষ্ট্রপতি কিংবা একজন বিচারক, যিনি নিরপেক্ষভাবে বিচার করেন, তিনিও ভোটের সময় কোনো না কোনো দলকে ভোট দেন।
ক্ষমতা বদলের জন্য নির্বাচন অপরিহার্য। কিন্তু সেই নির্বাচন কিভাবে হবে? কারা করবে? নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার নিশ্চয়তা থাকবে কি? নাকি আগামী নির্বাচনও ২০১৪ সালের মতো একতরফা হবে?
এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় এখনও আসেনি। নির্বাচনে যাওয়া, না যাওয়া নিয়ে বিএনপির মধ্যে মতভেদ রয়েছে। দলের একাংশ মনে করে, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হবে না।
কারণ সেই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না বলে তারা মনে করে। সব নাগরিক যেন তাদের ভোটগুলো তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে স্বাধীনভাবে দিতে পারে এজন্যই নির্বাচনের প্রাক্কালে সুশীল সমাজসহ সর্বসাধারণের মধ্যে নিরপেক্ষ বলে আওয়াজ ওঠে।
নিরপেক্ষ একটি ছোট শব্দ হলেও এর ওজন অনেক বেশি। শান্তিপ্রিয় মানুষ সাদা চোখে একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি বলতে বুঝে থাকেন- যিনি সৎ, লোভী নন, অন্যায় করেন না, দেশের বা দশের মঙ্গল চান, যার মাধ্যমে দশের বা দেশের উন্নতি হবে, শৃঙ্খলা রক্ষা হবে, কোনো পক্ষপাতিত্ব নয়, সবার জন্য সমান দায়িত্ব পালন করবেন। আবার কারও কারও মতে, নিরপেক্ষতা হচ্ছে শপথের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে কোনো নির্দিষ্ট পক্ষ অবলম্বন না করে সত্যের পক্ষ নেয়া।
গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত সুষ্ঠু নির্বাচন। একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন জাতিকে একটি সুন্দর সংসদ উপহার দিতে পারে। সব দল অংশ নিলে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না।
এ ক্ষেত্রে সরকারি দলের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর বাইরে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে সর্বজনগ্রাহ্য মতগুলো নিয়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি বিতর্কিত হয়, তাহলে দেশ ভয়াবহ পরিণতির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা দেশবাসীর।
মোহাম্মদ আবু নোমান : প্রাবন্ধিক, কদমতলী, ঢাকা
abunoman1972@gmail.com
