ক্রমবর্ধমান সাইবার অপরাধ
দমাতে জনবল ও সচেতনতা বাড়াতে হবে
প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০১৮, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবন দিনের পর দিন ইন্টারনেট-অনলাইননির্ভর হয়ে পড়ছে। কেনাকাটা, ব্যাংকিং লেনদেন থেকে শুরু করে একান্ত গোপনীয় ব্যক্তিগত তথ্য- সবকিছুই এখন হাতের মুঠোয় থাকা স্মার্টফোন, কম্পিউটার এবং অন্যান্য ডিভাইসে স্থান পাচ্ছে। ফলে একে কেন্দ্র করে নানা ধরনের অপরাধও পর্যায়ক্রমে বাড়ছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। দেশেও ক্রমান্বয়ে পর্নোগ্রাফি, ফেসবুক-ই-মেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং, ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে অর্থ চুরিসহ নানা অপরাধ বাড়ছে। তথ্য চুরির মাধ্যমে সংঘটিত এসব অপরাধকে সাইবার অপরাধ বলা হয়। ক্রমবর্ধমান সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে সচেতনতা তৈরিকে সামনে রেখে গোটা বিশ্বের সঙ্গে ‘গোপনীয়তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন, তথ্য সুরক্ষা ও আস্থা প্রতিষ্ঠা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বাংলাদেশেও গতকাল পালিত হয়েছে ডাটা প্রাইভেসি ডে বা তথ্য সুরক্ষা দিবস।
ইন্টারনেট মানুষের জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে পড়ায় এ সংক্রান্ত অপরাধ রোধে সচেতনতাই হতে পারে সবচেয়ে বড় রক্ষাকবচ। তবে কেবল সচেতনতা তৈরিই যথেষ্ট নয়, পাশাপাশি সাইবার অপরাধ দমনে কঠোর আইন ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার ব্যবস্থাও থাকতে হবে। সাইবার ক্রাইম ইউনিট নামে ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি ইউনিট আছে বটে, তবে এর জনবল মাত্র ৬৭। যে হারে সাইবার অপরাধ বাড়ছে ও মানুষ যে হারে ইন্টারনেটনির্ভর হচ্ছে, সে তুলনায় এ জনবল যে একেবারেই অপ্রতুল, তা বলাই বাহুল্য। দেশজুড়ে বিভিন্ন থানায় সাইবার অপরাধে যেভাবে মামলা বাড়ছে এবং সাইবার ক্রাইম ইউনিটে যে হারে মামলা আসছে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে অবিলম্বে এ খাতের জনবল বাড়াতে হবে।
মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ভঙ্গের মাধ্যমে তাদের জীবন বিষিয়ে তোলার পাশাপাশি আর্থিক খাতে সাইবার ক্রাইম কত বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে, আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে রিজার্ভের মোটা অঙ্ক চুরি করে ফিলিপাইনে নিয়ে যাওয়া থেকেই তা স্পষ্ট। এ অবস্থায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গণমানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি, কঠোর আইন ও এর প্রয়োগের মাধ্যমেই কেবল ধুরন্ধর সাইবার অপরাধীরা নিষ্ক্রিয় হতে পারে। অথচ দুর্ভাগ্যের বিষয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনই প্রকাশ করা হয়নি। আমরা মনে করি, ব্যাংক ও আর্থিক খাতেরসহ সব ধরনের সাইবার অপরাধ, এমনকি যে কোনো অপরাধ দমনেই দৃষ্টান্তমূলক সাজার বিকল্প নেই। অন্যদিকে অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরীদের হাতে অ্যান্ড্রয়েডসহ দামি ডিভাইস তুলে দেয়ার ক্ষেত্রে অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। কারণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়ে জীবনকে হুমকির মুখে ফেলছে। সবার সচেতনতা, কঠোর আইন ও এর কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে সাইবার সুরক্ষা নিশ্চিত হবে, এটিই প্রত্যাশা।
