বেপরোয়া টাকা পাচার
ছিদ্রগুলো বন্ধ করা জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশ থেকে অর্থ পাচার যে অব্যাহত আছে তা নানাভাবেই প্রকাশ পাচ্ছে। শুধু অব্যাহত আছে তাই নয়, যে হারে অর্থ পাচার হচ্ছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবৈধ আর্থিক প্রবাহ বা মুদ্রা পাচার নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণকারী ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ৫৯০ কোটি ডলার (প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা) পাচার হয়েছে।
গত ১০ বছরে পাচারের পরিমাণ ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিবছর গড়ে পাচার হয়েছে ৫৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থ পাচার সংক্রান্ত সাম্প্রতিক সময়ের তথ্য এখনও প্রকাশিত হয়নি। ধারণা করা যায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ আরও বেশি হবে।
এর একটি কারণ, গত বছর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনী বছরে সচরাচর অর্থ পাচার বেড়ে যায়। তাই গত বছর বেপরোয়াভাবে অর্থ পাচার হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আমরা যদি গড় হিসাবটিই ধরি, অর্থাৎ বছরে ৫৫ হাজার কোটি টাকা, তাহলে দেখা যায়, এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে দুটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। আর ১০ বছরের অর্থ পাচারের হিসাব ধরলে দেখা যায়, এই পরিমাণ অর্থ চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের চেয়েও বেশি।
কাজেই এই বিপুল পরিমাণ অর্থের পাচার রোধ করা গেলে দেশ কতটা উপকৃত হতে পারত তা সহজেই অনুমেয়। এ থেকে সহজেই বোঝা যায়, অর্থ পাচার রোধ করা কতটা জরুরি আমাদের জন্য।
অর্থ পাচার হচ্ছে নানা পন্থায়। জিএফআইর প্রতিবেদনে বাংলাদেশ থেকে চারটি প্রক্রিয়ায় অর্থ পাচারের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হল- বিদেশ থেকে পণ্য আমদানিমূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং), রফতানিতে মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং), হুন্ডি ও অন্য মাধ্যমে বিদেশে লেনদেন এবং ভিওআইপি ব্যবসা। তবে এর বাইরে সাম্প্রতিক সময়ে অর্থ পাচারের একটি বড় মাধ্যম হয়ে দেখা দিয়েছে রেমিটেন্স।
একটি চক্র বৈদেশিক মুদ্রায় প্রবাসীদের রেমিটেন্স সংগ্রহ করে তা বিদেশেই রেখে দেয়, আর দেশে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকায় এর দায় শোধ করা হয়। আমাদের ধারণা, এসব ছাড়াও আরও নানাভাবে অর্থ পাচার হচ্ছে। পাচারের ছিদ্রগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে তা বন্ধের পদক্ষেপ নেয়া গেলে রোধ হতে পারে অর্থ পাচার। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে তৎপর হতে হবে এবং নজরদারি বাড়াতে হবে। এসব ক্ষেত্রে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকাটাও জরুরি বটে।
অর্থ পাচার বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে দুটি কারণ কাজ করছে বলে আমরা মনে করি। প্রথমত, দেশে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো নয়। দ্বিতীয়ত, ব্যাপক দুর্নীতি। যে অর্থ পাচার হয়ে যায়, দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ভালো থাকলে সেই অর্থ দেশেই বিনিয়োজিত হতো।
এর ফলে নতুন নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠত, বাড়ত কর্মসংস্থানের সুযোগ। কাজেই অর্থ পাচার রোধে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত। দৃষ্টি দিতে হবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার বিষয়েও। স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ দেশে পুঁজির নিরাপত্তার অভাব অনেকাংশে দূর করে থাকে। বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থের বড় অংশ দুর্নীতির টাকা। কাজেই দুর্নীতির লাগামও টেনে ধরতে হবে শক্ত হাতে।
