মানুষের জীবন কি এতই সস্তা!
মো. তাসনিম হাসান আবির
প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০১৯, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রত্যেক মানুষের কাছে তার জীবনটাই সবচেয়ে দামি। মানুষ এই জীবনের জন্য কতকিছুই না করে! নিজের জীবনের স্বাভাবিক পরিসমাপ্তির জন্য মানুষ অর্থ খরচ করে কত দূর-দূরান্তেই না যাচ্ছে। এই ক্ষুদ্র জীবনে যেমন স্বাভাবিকভাবে সে পৃথিবীতে এসেছে, তেমনি স্বাভাবিকভাবেই পৃথিবী থেকে চলে যেতে চায়। কিন্তু অনেক সময় অনেকের ভাগ্যে সেই স্বাভাবিক মৃত্যু জোটে না।
আগুনে পুড়ে মরার মতো দুঃসহ মৃত্যুও অনেকের কপালে থাকে। জন্ম, মৃত্যু আমাদের হাতে নেই। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমরা সাবধানতা অবলম্বন করতে পারি, আর ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবনকে স্বাভাবিক গতিপথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। আমাদের সমস্যা হল, আমরা ভুল থেকে শিক্ষা নেই না। একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিই।
দেশে গত ১০ বছরে অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছে ১ হাজার ৫৯০ জন। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস ও ফায়ার ডিফেন্স অধিদফতরের ২০১০ থেকে ২০১৮ সালের পরিসংখ্যানে এ তথ্য পাওয়া যায়। এই সময়ে সবচেয়ে বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে ২০১০ সালে, পুরান ঢাকার নিমতলীতে। এতে ১২৪ জন প্রাণ হারায়। এরপর সাভারের আশুলিয়ায় তাজরিন ফ্যাশনসের অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারায় ১১১ জন। এরপর আরও অনেক ছোট-বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে।
গত ২০ ফ্রেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ঘটে গেছে একটি বড় অগ্নিকাণ্ড। এ ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৭০ জন। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে রাস্তা থেকে আবাসিক ভবন পর্যন্ত। ঝরে যায় এতগুলো প্রাণ। সম্পদের ক্ষতির পরিমাণও কম নয়।
নিমতলীর ঘটনার পর তদন্ত কমিটির সুপারিশ আলোর মুখ দেখেনি। চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থলে যে কয়েকটি ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে তার অনেকগুলোতেই রাসায়নিক গুদাম ছিল। যারা লোভের কারণে বেশি টাকা ভাড়া পাওয়ার আশায় রাসায়নিক দ্রব্য মজুদের জন্য গুদাম ভাড়া দিয়েছে, দেখা গেছে তারাও এই আগুনে পুড়ে মারা গেছে। এটাই নির্মম সত্য।
একটা সমাজে বসবাস করে আমরা স্বাভাবিক মৃত্যু অবশ্যই আশা করতে পারি। কর্মক্ষেত্র থেকে ফেরার সময় অবশ্যই আশা করতে পারি আমরা নিরাপদে বাসায় ফিরব। আবার রাতে বাসাবাড়িতে ঘুমানোর সময়ও আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে যাওয়ার আশা করতে পারি। আর এজন্য প্রয়োজন সবকিছুর সুষ্ঠু নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। রাসায়নিক দ্রব্যের গুদামগুলোকে দ্রুত সরিয়ে নিতে হবে। আবাসিক এলাকায় বা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এগুলোর অনুমোদন দেয়া যাবে না। প্রতিনিয়ত এসব এলাকা তদারকি করতে হবে, যেন কেউ অবৈধভাবে রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম গড়তে না পারে। আর যে নির্দিষ্ট এলাকায় এই গুদামগুলো তৈরি করা হবে, সেখানকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা সমাজের সাধারণ মানুষ যদি একটু সচেতন হই, তাহলে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
মানুষের জীবনের মূল্য কোনো কিছু দিয়ে পূরণ করা যায় না। তাই সবার পরিবারের কথা ভেবে, দেশের কথা ভেবে প্রত্যেকের জীবন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা থেকে রক্ষার চেষ্টা করতে হবে। চকবাজার থেকে রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম সরানোর এখনই উপযুক্ত সময়। আশা করি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেবে।
মো. তাসনিম হাসান আবির : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
