Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে তরুণদের ভাবনা

Icon

সফিউল আযম

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০১৯, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে তরুণদের ভাবনা

বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে ৭ মার্চ এক অবিস্মরণীয় দিন। আমরা যারা স্বাধীনতার পরে জন্মগ্রহণ করেছি এ ভাষণটি সরাসরি দেখতে বা শুনতে পারিনি। কিন্তু আজও যখন এই ভাষণ শুনি, আমরা উজ্জীবিত হই। নব উদ্যমে এগিয়ে চলার প্রেরণা পাই।

একজন নেতা কিভাবে একটি জাতিকে, একটি দেশকে একত্রিত করতে পারেন, একই দাবিতে সোচ্চার করতে পারেন- পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম দ্বিতীয় নজির নেই। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত হতাশা, শোষণ আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে যে কণ্ঠ ধ্বনিত হয়েছিল; যে মহাকাব্য রচনা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু, তার কোনো তুলনা নেই। আর সেজন্যই এই ভাষণ তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে, প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করে, এগিয়ে যাওয়ার শক্তি জোগায়।

ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লাখো মানুষের সামনে বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এটাই ছিল বাঙালির ঐক্যের মূলমন্ত্র, স্বাধীনতার ঘোষণা। বঙ্গবন্ধু প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন- ‘তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।’

৭ মার্চের ভাষণ বর্তমান প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখায়- অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কিভাবে প্রতিবাদী হতে হয়, কিভাবে মাথানত না করে অবিচল থাকতে হয়, কিভাবে এগিয়ে যেতে হয়। ভাষণটি যতবার শোনা হয়, ততবারই নতুন ভাবনা তৈরি হয়। এর প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য একেকটি স্বতন্ত্র অর্থ বহন করে, নতুন বার্তা দেয়। ১৮ মিনিটের একটি ভাষণ একটি দেশের স্বাধীনতা অর্জন ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, তার জ্বলন্ত প্রমাণ এই কালজয়ী ভাষণ।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য দলিল’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করেছে। বিশ্বখ্যাত লেখক ও ইতিহাসবিদ জ্যাকব এফ ফিল্ডের বিশ্বসেরা ভাষণ নিয়ে লেখা ‘উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেস: দ্য স্পিচ দ্যাট ইনস্পায়ার্ড হিস্টোরি’ বইয়ে বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ স্থান পেয়েছে। অসংখ্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ।

এখন শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের প্রজন্মের পর প্রজন্ম জানতে পারছে কঠিন পরিস্থিতিতে কীভাবে একটি ভাষণের মাধ্যমে ভারসাম্য রক্ষা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কীভাবে শান্ত রেখেছিলেন কোটি মানুষকে, আবার সংগ্রামের প্রস্তুতির বার্তাও দিয়েছিলেন। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ না দিয়ে, উসকানি না দিয়ে কিভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয় সেই শিক্ষা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু।

নতুন প্রজন্মকে শিখিয়েছেন কিভাবে গণতান্ত্রিক উপায়ে সামনে এগিয়ে যেতে হয়, অন্যের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হয়। ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও একজন যদিও সে হয়, তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেব।’ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবিকতা আর অসাম্প্রদায়িকতার এক মহাকাব্যিক রচনা এই ঐতিহাসিক ভাষণ।

এই ভাষণের গল্প শুনেছি প্রথমে বাবা-মায়ের কাছে, তারপর শুনেছি স্কুলে পড়ার সময় ক্যাসেটে। যতবারই শুনি, কোনো বিরক্তির ছাপ দেখি না। বরং ভাষণটি উজ্জীবিত করে, এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখায়। আমার ছোট্ট সন্তানের মুখে যখন ভাষণটি শুনি তখন গর্বে বুক ভরে ওঠে। সে নিজে নিজেই রপ্ত করেছে ঐতিহাসিক এই ভাষণ। হৃদয় থেকেই উৎসারিত হয় স্বতঃস্ফূর্তভাবে।

সফিউল আযম : এডিটর ইন চিফ, ইয়ুথ জার্নাল

mohammad.safiul@gmail.com

 

৭ই মার্চ ভাষন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম