মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন সুন্দর হোক
আর কে চৌধুরী
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায়। ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর বাঙালি জাতি পাকিস্তানি শাসক ও শোষক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করা শুরু করে। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ রাতে শুরু হয় পাকহানাদার বাহিনীর নিষ্ঠুর গণহত্যা।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের সূচনালগ্নে পাকবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় অবরুদ্ধ স্বদেশ থেকে দখলদার বাহিনীকে বিতাড়িত করার মরণপণ লড়াই- মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে দেশ স্বাধীন না করলে আজ আমরা কোনোভাবেই নিজেদের স্বাধীন জাতি ভাবতে পারতাম না, পরাধীনতার শিকল হয়তো আমাদের আজও তাড়া করে বেড়াত।
বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তারা স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকিস্তানি বর্বর বাহিনীকে বিতাড়িত করার মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ’ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ছিনিয়ে এনেছেন। ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমাদের এ স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধারা কখনও তাদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করেননি।
মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের অহংকার। বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমান উন্নয়নে নানাবিধ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তাদের জন্য বাসস্থান, চিকিৎসাসেবা, কোটাভিত্তিক সরকারি চাকরিতে নিয়োগ এবং তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করি এ সুযোগ-সুবিধা পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে।
সরকার সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা ৯০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকায় উন্নীত করাসহ বছরে দুটি উৎসবভাতা প্রদান করছে। বিভিন্ন শ্রেণির যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, শহীদ পরিবারের রাষ্ট্রীয় ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করে মাসিক সর্বনিম্ন ২৫ হাজার এবং সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। ৬৭৬ জন খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতার পরিমাণ বাড়িয়ে মাসিক সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন ১৫ হাজার টাকা হারে প্রদান করা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধারা প্রতি বছর পাঁচ হাজার টাকা বিজয় দিবস ভাতা এবং দুই হাজার টাকা নববর্ষ ভাতা পাচ্ছেন।
বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে কাজ করছেন। আমি একজন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাই প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিতে একজন মুক্তিযোদ্ধা রাখার জন্য। এতে করে শিক্ষা খাতে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পৃক্ততা বাড়বে। মুক্তিযোদ্ধারা যেমন জীবন বাজি রেখে দেশ স্বাধীন করেছেন, তেমনি তারা শিক্ষা খাতেও শ্রম ও মেধা দিয়ে দেশের শিক্ষা কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে পারবেন।
ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে সেজন্য মুক্তিযোদ্ধারা বিনা খরচে শিক্ষার্থীদের সামনে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে পারবেন। এতে করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে। কিভাবে রাজাকার, আল-বদররা দেশে গণহত্যা-অগ্নিসংযোগ করেছে, তাও সঠিকভাবে জানতে পারবে। কাদের অবদানে আমরা এই স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি, শিক্ষার্থীদের তা জানতে হবে। আশা করি সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মানের স্থানে রাখবে।
মুক্তিযোদ্ধারা দেশের স্বাধীনতা এনেছেন, পরবর্তী প্রজন্মকে স্বাধীনভাবে বাঁচার সুযোগ করে দিয়েছেন। খুব স্বাভাবিক কারণেই মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সুন্দর জীবন ও সম্মান নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।
আর কে চৌধুরী : সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক; মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা
