Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবস: মানুষ একটি সমগ্র জাতি

Icon

শহিদুল আলম মজুমদার

প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবস: মানুষ একটি সমগ্র জাতি

অভিবাসন একটি চলমান প্রক্রিয়া। সৃষ্টির আদিকাল থেকে মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গিয়ে বাসস্থান স্থাপন করছে। মানুষের এ এক চিরন্তন প্রবণতা।

যুগে যুগে বিভিন্ন প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বহুবিধ কারণে মানুষ পাড়ি জমিয়েছে এক দেশ থেকে অন্য দেশে। পৃথিবীতে অনেক দেশই উন্নত হয়ে উঠেছে অভিবাসী মানুষের প্রচেষ্টায়। পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশ গড়ে উঠেছে অভিবাসীর অক্লান্ত কর্মতৎপরতায়।

বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় যেসব বিশাল নির্মাণ কাঠামো দেখা যায়, তার সবই অভিবাসী কর্মীদের শ্রমের ফসল। অভিবাসন এখন সমগ্র বিশ্বে একটা অবশ্যম্ভাবী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে পরিণত হয়েছে।

অধিকাংশ দেশ জনঅভিবাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। শ্রমের অপরিহার্যতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে জনশক্তির প্রয়োজনীয়তা এক দেশ থেকে অন্য দেশে কর্মী গমনকে প্রভাবিত করে। বিগত শতাব্দী থেকে অভিবাসনের ওপর বিভিন্ন দেশ নানাভাবে কড়াকড়ি আরোপ করছে। এরপরও থেমে নেই অভিবাসন।

এর কারণ মানুষ একটি সমগ্র জাতি, একে বিচ্ছিন্ন করে রাখা সম্ভব নয়। বিশ্বজুড়ে মূলধন, পণ্য আর সেবার বাধাহীন যাতায়াতের সঙ্গে সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি অভিবাসন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছে।

সমগ্র বিশ্বে অভিবাসী শ্রমিকদের দুর্ভোগ, দুর্দশা ও তাদের ওপর সহিংসতা, নিপীড়ন ও নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় অভিবাসীদের মানবাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ১৯৯০ সালের ১৮ ডিসেম্বর একটি সনদ অনুমোদিত হয়, যা হল ‘সব অভিবাসী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অধিকার সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক সনদ’। জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের স্বীকৃতি একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

অভিবাসন প্রক্রিয়া বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭৬ সালে প্রথম সরকারি পর্যায়ে বৈদেশিক কর্মসংস্থান শুরু হলে প্রথম বছর মাত্র ৬ হাজার ৮৭ জন বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থান লাভ করে।

বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশী কর্মী কর্মরত রয়েছে। বিদেশে কর্মরত বিপুলসংখ্যক প্রবাসী কর্মী দেশে বেকারত্বের ওপর চাপ কমানোর পাশাপাশি তাদের মেধা, শ্রম ও নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স জাতীয় অগ্রগতি ত্বরান্বিত করছে।

রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকে সঞ্চিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে, যা আমাদের অর্থনীতিকে দাঁড় করাচ্ছে শক্ত ভিত্তির ওপর।

নতুন নতুন শ্রমবাজার সম্প্রসারণের ফলে প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখ কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। রেমিটেন্স আয়ের মাধ্যমে দেশ যেমন বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ সমৃদ্ধ করছে, তেমনি প্রবাসীরা তাদের পারিবারিক জীবন মান উন্নত করতে পারছে, আর বাড়ছে তাদের বিনিয়োগ ক্ষমতা।

বস্তুত রেমিটেন্সের সঠিক ব্যবহারের বিষয়টিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অভিবাসনের সার্থকতা নির্ভর করে এর ওপরই। সঠিক পরিকল্পনার অভাবে অনেকে তার কষ্টার্জিত অর্থ ভাগ্যোন্নয়নের কাজে লাগাতে সমর্থ হয় না।

অভিবাসনকে সার্থক করতে হলে অভিবাসী কর্মীদের অর্জিত আয় এবং লব্ধ জ্ঞান ও দক্ষতা দেশে কাজে লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারি ও এনজিও পর্যায়ে কর্মসূচি অপ্রতুল। ফেরত আসা কর্মীদের ব্যবসা উদ্যোগ প্রশিক্ষণ এবং ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহায়তা সংক্রান্ত সুযোগগুলো সম্পর্কে অবহিত করা দরকার।

সহযোগিতা, সহমর্মিতা আর সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অভিবাসন এক উজ্জ্বল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে।

শহিদুল আলম মজুমদার : সরকারি কর্মকর্তা

 

অভিবাসন দিবস

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম