করোনা পরামর্শ
করোনা সুরক্ষায় কেমন পোশাক
নাজমুল হক
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
করোনাভাইরাস কি হাত-পা বা শরীর দিয়ে ঢুকতে পারে? বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা চোখে ঢুকতে পারলে ভাসমান ভাইরাস/ড্রপলেট চোখে ঢুকবে না কেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কানের ছিদ্র দিয়েও ভাইরাস ঢুকতে পারে; কিন্তু অনেকেই কান ঢাকে না কেন? শরীরে পরিহিত গাউনটা কি পিপিই (Personal Protective Equipment) নাকি ডিপিই (Dress Protective Equipment)? করোনা সুরক্ষার প্রশ্নে এ ধরনের নানা প্রশ্ন জাগে।
পিপিই’র কথা বললেই সাদা গাউনের মতো একটি পোশাক আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কিন্তু এটি কি আমাদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা দেয়? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, পর্যাপ্ত সুরক্ষার জন্য পিপিইতে মোট পাঁচটি উপকরণ থাকতে হবে- গাউন, গ্লাভস, মুখের আবরণ (ঋধপব ঝযরবষফ), চোখ ঢাকার জন্য মুখের সঙ্গে লেগে থাকা চশমা ও মাস্ক।
একজন ব্যবহারকারীকে সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করে পিপিই পরতে ও খুলতে হয়, কারণ এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই অনেক সময় পিপিই দূষিত হয়ে পড়তে পারে। এর মধ্যে মুখের আবরণটি তখনই আবশ্যক, যখন ভাইরাস বাতাসে ভেসে বেড়ায়। আমি অনেকের সঙ্গে পিপিই নিয়ে কথা বলেছি, তারা পিপিই বলতে শুধু গাউনটিকেই বোঝেন, যা একটি ভুল ধারণা। আমরা জানি, করোনাভাইরাস নাক, মুখ, চোখ ও কান দিয়ে ঢুকতে পারে। তাহলে কিভাবে শুধু গাউনটি আমাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দেবে? বরং আমরা বলতে পারি, ফেস শিল্ড, আঁটোসাঁটো চশমা ও মাস্ক আমাদের প্রকৃত পিপিই আর গাউনটি হচ্ছে ডিপিই। কারণ তা মূলত পোশাকের সুরক্ষা দেয়। অনেককেই দেখা যায় অফিস বা ব্যাংকে ভাইরাস থেকে সুরক্ষা পেতে পিপিই’র গাউন ও গ্লাভস পরে আছেন; অথচ মাস্কটি থুতনির নিচে নামানো, তাছাড়া চোখে চশমাও নেই। তাহলে কি তাদের ধারণা ভাইরাসটি হাত-পা বা শরীর দিয়ে ঢোকে? অনেক স্থানে জীবাণুমুক্ত টানেল বসানো হয়েছে, এটা কতটুকু কার্যকর? যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, তারা জীবাণুমুক্ত টানেল ব্যবহার করলে কি ভাইরাসমুক্ত হবেন? অবশ্যই না, কারণ তাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে অ্যারোসল স্প্রের মতো ক্ষুদ্র ড্রপলেট বের হতে থাকে, যা অন্যদের আক্রান্ত করে। যেমন কেউ কাঁচা পেঁয়াজ খেয়ে আপনার ৩ ফুট থেকে ৬ ফুটের মধ্যে এসে কথা বললে আপনি কাঁচা পেঁয়াজের গন্ধ পান; কারণ তার মুখ থেকে অ্যারোসল স্প্রের মতো ক্ষুদ্র ড্রপলেট আপনার নাকে পৌঁছে নিঃশ্বাসের সঙ্গে ভেতরে ঢোকে। ঠিক তেমনি করোনা আক্রান্ত কেউ আপনার ৩ ফুট থেকে ৬ ফুটের মধ্যে এসে কথা বললে তার ভাইরাসযুক্ত ক্ষুদ্র ড্রপলেট আপনার নাকে পৌঁছে নিঃশ্বাসের সঙ্গে ভেতরে ঢুকবে। তাই আত্মরক্ষার্থে অন্যের নিঃশ্বাস অঞ্চলে সুরক্ষিত মাস্ক ছাড়া কোনোভাবেই ঢোকা যাবে না, অর্থাৎ জনসমাগমে মাস্ক পরতেই হবে। বস্তুত করোনাভাইরাস থেকে পরিত্রাণ পেতে সবাইকে মানসম্মত মাস্ক পরিয়ে দিতে পারলেই সমস্যার অনেকাংশে সমাধান হবে। প্রয়োজনে বিশেষ ধরনের হেলমেট তৈরি করতে হবে, যা হবে বাইকের হেলমেট থেকে অনেক হালকা ও আরামদায়ক। সম্পূর্ণ শরীরের মধ্যে মাত্র চার ইঞ্চি জায়গা দিয়ে ভাইরাসটি প্রবেশ করে- নাক, মুখ, চোখ ও কান। এই চার ইঞ্চি জায়গা যদি সবাই হেলমেট বা ফেস শিল্ড, আঁটোসাঁটো চশমা ও মাস্ক দিয়ে নিরাপদ রাখতে পারেন, তবে নিরাপদ থাকবেন সবাই।
নাজমুল হক : প্রভাষক, বনানী বিদ্যানিকেতন কলেজ; ত্রয়োদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অর্থায়ন ও ব্যাংকিং বিষয়ে প্রথম স্থান অর্জনকারী
sumon.cdenim@gmail.com
