বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনি
অবিলম্বে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করা হোক
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ৪৫ বছর পেরিয়ে গেছে। দীর্ঘদিন পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয় এবং বিচারে ১২ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০১০ সালে ১২ খুনির মধ্যে ৬ খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।
এরপর চলতি বছরের এপ্রিলে দীর্ঘদিন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে লুকিয়ে থাকা খুনি আবদুল মাজেদকে ঢাকায় গ্রেফতার করে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। খুনিদের একজন আজিজ পাশা ২০০১ সালে জিম্বাবুয়েতে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছে। বাকিরা বিভিন্ন দেশে পলাতক রয়েছে। যারা পলাতক রয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে লে. কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আবদুর রশিদ, মেজর (বরখাস্ত) শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল (অব.) এএম রাশেদ চৌধুরী, মেজর (অব.) এসএইচএমবি নূর চৌধুরী ও রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন খান। এসব পলাতক খুনিকে দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার দাবি উচ্চারিত হয়ে আসছে অনেক দিন থেকেই। কিন্তু প্রতি ১৫ আগস্টের প্রাক্কালে সরকারি পর্যায় থেকে তাদের ফিরিয়ে এনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কথা বলা হলেও সেই কথার বাস্তব রূপ দেখা যাচ্ছে না। পুলিশ সদর দফতরের ইন্টারপোল শাখার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যেসব খুনি বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে রয়েছে, তাদের গ্রেফতারের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। বলা হচ্ছে, আত্মগোপনে থাকা খুনিদের গ্রেফতারে ইন্টারপোল শাখা থেকে সম্প্রতি ১৯৩টি দেশের ইন্টারপোল শাখার সঙ্গে যোগাযোগ করে জারি করা রেড নোটিশ রিভিউ করা হয়েছে, তবে বন্দি বিনিময় চুক্তি না থাকায় আত্মস্বীকৃত খুনিদের ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না।
আমাদের কথা হল, পলাতক খুনিদের এত দীর্ঘ সময় পরেও যখন দেশে ফেরত আনা যাচ্ছে না, তখন বুঝতে হবে ফেরত আনার প্রক্রিয়ায় কোনো গলদ রয়েছে। এটা ঠিক, খুনিদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের আইনি বাস্তবতার একটা ব্যাপার রয়েছে। কিন্তু এত দীর্ঘ সময়েও সেই সমস্যা অতিক্রম না করার বিষয়টি বোধগম্য নয়। পলাতক খুনি শরিফুল হক ডালিম ও আবদুর রশিদের অবস্থানের ব্যাপারে সরকারের কাছে নাকি নিশ্চিত তথ্য নেই! এ কথা হজম করা কঠিন। বর্তমান যুগে দু’জন খুনি কোথায় অবস্থান করছে, তা জানতে পারা খুব কঠিন কাজ নয়।
বঙ্গবন্ধুর সব খুনির শাস্তি কার্যকর করা একটি জাতীয় দাবি। এ দাবি সম্পূর্ণভাবে পূরণ না হওয়া পর্যন্ত জাতি কলঙ্কমুক্ত হতে পারছে না। সময় অনেক পেরিয়েছে। আমরা আশা করব, পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালাবে। খুনি নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াটি কেন থেমে গেছে, তা বোধগম্য নয়। এই খুনি কানাডায় অবস্থান করছে এবং তার রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের আবেদন কানাডার আদালত খারিজ করে দিয়েছে। কানাডার আদালত তাকে দেশ থেকে বহিষ্কারের আদেশও দিয়েছিল, যদিও তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদেশটি ঝুলে আছে। নূর চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনা খুব কঠিন কাজ নয় বলে মনে করি আমরা। নূর চৌধুরীসহ পলাতক সব খুনিকে অচিরেই দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
