বিশ্ব তুলা দিবস
অর্থনীতিতে তুলার অবদান অনেক
ড. মো. তাসদিকুর রহমান
প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
‘তুলা বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক আঁশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্ব তুলা দিবস পালিত হচ্ছে আজ।
মহামারী করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে পালিত না হলেও বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন কার্যাবলির মাধ্যমে দিবসটি উদ্যাপন করছে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো তুলা উন্নয়ন বোর্ড দিবসটি উদ্যাপন করতে যাচ্ছে।
তুলা একটি আন্তর্জাতিক মানের শিল্প ফসল, যা বিশ্বব্যাপী ‘সাদা সোনা’ হিসেবে পরিচিত। তুলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঐতিহ্য, ইতিহাস, সভ্যতা ও অর্থনীতি। এটি আমাদের দ্বিতীয় মৌলিক চাহিদা, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের তুলার তৈরি বস্ত্রের প্রয়োজন হয়। খাদ্য ছাড়া আমরা কিছুদিন বাঁচতে পারলেও তুলা এবং তুলার তৈরি বস্ত্র ছাড়া আমরা একদিনও চলতে পারব না। বিশ্বে প্রায় ৭৫টি দেশে তুলা চাষ করা হয়।
তুলা উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ৪০তম অবস্থানে রয়েছে। তুলা উৎপাদনে প্রতিনিধিত্বকারী দেশগুলোর মধ্যে ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান ও ব্রাজিল অন্যতম। সমগ্র বিশ্বের প্রায় ২৬ শতাংশ তুলা ভারত এবং ২২ শতাংশ চীনে উৎপাদিত হয়।
প্রতি টন বীজতুলা প্রতিদিন গড়ে পাঁচজন লোকের কর্মসংস্থান তৈরিতে সহায়তা করে। বিশ্বের ২.১ শতাংশ চাষযোগ্য জমিতে তুলার আবাদ হয় এবং সেই তুলা টেক্সটাইল সেক্টরে ২৭ শতাংশ অবদান রাখে।
বাংলাদেশে তিনটি শস্য মৌসুমের মধ্যে খরিপ-২-তে মাত্র ০.৫২ শতাংশ জমিতে তুলা চাষ করা হয়। তুলা থেকে আঁশ ছাড়াও ভোজ্যতেল, খৈল জ্বালানি উপজাত হিসেবে পাওয়া যায়। ভোজ্যতেলে খুব কম পরিমাণে কোলস্টেরল থাকে এবং তুলার বীজ থেকে ১৫-২০ শতাংশ হারে তেল পাওয়া যায়, যা উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ এবং সয়াবিন তেলের চেয়েও পুষ্টিকর।
স্বাধীনতা আগে বাংলাদেশে তুলা উৎপাদন হতো না। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৪ ডিসেম্বর তুলা উন্নয়ন বোর্ড গঠন করেন। পাটচাষের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানে নেয়া ৩২৫ জন চাষীকে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে নিয়ে আসেন এবং ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশৈংকেলে ৭৯৬ একর জমি তাদের মধ্যে বরাদ্দ করেন তুলা চাষের জন্য।
এর মধ্যদিয়ে দেশে তুলা চাষের শুভ সূচনা ঘটে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দেশে তুলাচাষ কার্যক্রম অনেকটা স্তিমিত হয়ে যায়।
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কোনো নিজস্ব ভবন ছিল না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তুলা উন্নয়ন বোর্ডের জন্য একটি নিজস্ব ভবনের জায়গা ও অর্থ বরাদ্দ করেছেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর কৃষিমন্ত্রী তুলা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
তুলাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক তন্তুর গবেষণা, সংরক্ষণ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও তুলাচাষ সম্প্রসারণের জন্য একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেয়ার কাজ শুরু করেছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড। সব কার্যক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশে ২০ লাখ বেল তুলা উৎপাদন সম্ভব হবে।
তুলা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। জিডিপির ১১.১৬ শতাংশ আসে বস্ত্র খাত থেকে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ সেক্টর আয় করেছিল ৩৪.১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্ব তুলা দিবস উদ্যাপনের মধ্যদিয়ে দেশে তুলার সঙ্গে সম্পর্কিত সব কার্যক্রম আরও বেগবান হবে এবং তা অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে-এই হোক আজকের দিনের অঙ্গীকার।
কৃষিবিদ ড. মো. তাসদিকুর রহমান : উপপরিচালক (স. দ.), তুলা উন্নয়ন বোর্ড, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা
