Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্ব কেন?

Icon

মোশাররফ হোসেন মুসা

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্ব কেন?

স্বাধীন দেশে একজন জনপ্রতিনিধির বড় যোগ্যতা তার মালিকানাবোধ (Ownership mentality)। আমাদের দেশপ্রেমিক পুর্বপুরুষরা এ মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্যই বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।

মালিকানাবোধের সঙ্গে দায়িত্বশীলতা ও ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। তারা জনসেবক হওয়ার ঘোষণা দিয়ে নির্বাচিত হন এবং সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের জন্য শপথবাক্য পাঠ করেন। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অধীন থেকে রাষ্ট্রের কর্মচারীরা দেশগঠনে ভূমিকা রাখেন।

জনপ্রতিনিধিরা অর্পিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রাষ্ট্রের কর্মচারীরা নিরপেক্ষভাবে ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন কি না, সেটা দেখাও তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু কয়েকটি ঘটনায় প্রমাণ হয়, রাষ্ট্রের কর্মচারীরা এখন জনপ্রতিনিধিদের কাজ করছেন। এতদিনেও কেন যে আমাদের অধিকাংশ রাজনীতিকের মনে মালিকানাবোধ জাগ্রত হলো না, তা গবেষণার দাবি রাখে।

সেটা কি দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসনের কুফল, না রাজনীতিকদের সদিচ্ছার অভাব? গত ১২ অক্টোবর বেড়া উপজেলার সমন্বয় কমিটির সভা চলাকালে পৌর মেয়র উপজেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকা কাজিরহাট ও নগরবাড়ি ঘাট তার পক্ষের লোকদের ইজারা দেওয়ার জন্য একটি লিখিত রেজুলেশন উপস্থাপন করেন এবং তা অনুমোদন দেওয়ার জন্য চাপ দেন।

ইউএনও বিষয়টি সরকারি নীতিমালাবিরোধী বলে মন্তব্য করলে মেয়র তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন (পরদিন এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মেয়রকে সাময়িক বরখাস্ত করেন)। একটি ইউনিয়নে চারটি শর্ত পূরণ হলে, সর্বোপরি আর্থিক সক্ষমতা অর্জন করলে সেই ইউনিয়নকে পৌরসভা ঘোষণা দেওয়া হয়। পৌরসভা ইউনিয়নের চেয়ে বেশি স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে এবং পৌরসভায় কর্মচারীর সংখ্যাও বেশি।

সে জন্য মেয়রদের অধিক দায়িত্বশীল হতে হয়। কিন্তু দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় প্রমাণ হয়, দলে যোগ্য ব্যক্তিদের বাছাইয়ে গাফিলতি রয়েছে। অর্থাৎ, কোনো পক্ষই স্থানীয় সরকারকে কার্যকর করার জন্য আন্তরিকতার পরিচয় দিচ্ছে না।

১০ অক্টোবর ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফরিদপুর-৪ আসনের এমপি মুজিবর রহমান চৌধুরী (নিক্সন) সরকারি কর্মকর্তাদের হুমকি-ধমকি প্রদর্শন করেন।

তার অভিযোগ, প্রশাসন ইচ্ছে করেই তার পক্ষের লোকদের গ্রেফতার ও হয়রানি করেছে। তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক বলেন, প্রশাসন ইসির দেওয়া দায়িত্ব পালন করেছে মাত্র। অর্থাৎ, তিনি নিজে একজন আইনপ্রণেতা হয়েও আইনভঙ্গের পক্ষে (নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় ইসির নির্দেশে স্থানীয় নির্বাচন কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন এবং বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন)।

গত ২৫ অক্টোবর রাতে নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট মো. ওয়াসিফ আহমেদের মোটরসাইকেলের সঙ্গে হাজি সেলিম এমপির পুত্র ঢাকা (দক্ষিণ) সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ইরফান সেলিমকে বহনকারী একটি জিপের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এ ঘটনার জের ধরে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় এবং কাউন্সিলর ইরফান নৌ-কর্মকর্তাকে মেরে আহত করেন।

এ ঘটনায় ধানমণ্ডি থানায় একটি মামলা হয়েছে। বর্তমানে তিনি জেলহাজতে আছেন এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। শুধু এ ঘটনাগুলোই নয়, দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। পত্রিকার এ সংক্রান্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে: ‘কোথাও কোথাও জনপ্রতিনিধিদের বেআইনি কথা না শোনায় কর্মস্থল থেকে পালাতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের। কেউ কেউ তদবির করে অন্যত্র পোস্টিং নিচ্ছেন।’

এ অবস্থায় রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে গণতন্ত্রের চর্চা ছাড়া জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী, জনসাধারণ কারও মধ্যেই মালিকানাবোধ জাগ্রত করা সম্ভব নয়।

মোশাররফ হোসেন মুসা : গণতন্ত্রায়ন ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার বিষয়ে গবেষক

musha.pcdc@gmail.com

 

জনপ্রতিনিধি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম