কেটে যাক দুঃসময়
কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম
প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিশ্ববাসী কখনই বিদায়ী ২০২০ সালকে ভুলবে না, ভুলতে পারবে না, ভোলা সম্ভব হবে না। কেমন ছিল বিদায়ী বছর? ভাবতেই আঁতকে উঠি! বিশ্বজুড়ে দুর্যোগের শুরু হয়েছিল বছরের শুরুতেই। প্রাণসংহারকারী করোনাভাইরাসের আক্রমণে গোটা বিশ্ব লণ্ডভণ্ড হয়েছে। এমন দুর্যোগকাল এ শতকে কেউ দেখেনি। গৃহবন্দি হতে হয়েছে বিশ্বের প্রায় সব মানুষকে। এখনও থামেনি করোনার ঝড়। ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলেও করোনা প্রতিরোধের শতভাগ নিশ্চয়তা এখনও দিতে পারছে না কেউ। এত বড় একটা সংকট পৃথিবীতে আসবে সেটা কেউ আঁচ করতে পারেনি।
পৃথিবী সময়ে সময়ে বহু ক্রান্তিকাল অতিক্রম করেছে। তা থেকে উতরেও গেছে মানুষ। এবারের কঠিন সময় কবে পার হবে, তা এখনও অনিশ্চিত। করোনাভাইরাস মানুষের জীবনধারা পাল্টে দিয়েছে। কলকারখানা-অফিস-আদালত সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিশ্বের প্রায় সব পর্যটন স্পট, নামিদামি হোটেল-মোটেল, শপিংমল বন্ধ থেকেছে। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, এমনকি পবিত্র হজব্রতও পালন করতে পারেনি মানুষ।
করোনার কঠিন সময় দেশে চিকিৎসাব্যবস্থার করুণ অবস্থা দেখা গেছে। ছিল না চিকিৎসকের পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী এবং রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় পথ্য। এমনকি অন্য রোগের চিকিৎসা পেতেও মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। উন্নত দেশগুলোতেও সংকট পরিলক্ষিত হয়। ফলে চিকিৎসকসহ বহু মানুষের প্রাণ গেছে। বলতে গেলে আধুনিক সব চিকিৎসাব্যবস্থা করোনার কাছে প্রচণ্ডভাবে মার খেয়েছে। দিয়েছে বড় ধরনের ঝাঁকুনি। বুঝিয়ে দিয়েছে, অতি উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা গড়ে তোলা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
করোনায় বিপর্যস্ত হয়েছে গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। জাতিসংঘ বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। চাকরি ও অর্থ উপার্জনের পথ রুদ্ধ হয়েছে বহু মানুষের। বেড়েছে বেকারত্ব। অর্থ ও খাদ্য সংকটের কারণে দরিদ্র দেশগুলোতে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে, এমন আশঙ্কাও করা হচ্ছে। করোনার কারণে বিশ্বজুড়ে ভেঙে পড়েছে শিক্ষাব্যবস্থা। দীর্ঘসময় ধরে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সব ধরনের পরীক্ষা বাতিল করতে হয়েছে। যেন এক অনিশ্চিত গন্তব্যে যাত্রা! যদিও অনলাইনে ক্লাস নিয়েছেন শিক্ষকরা। করোনার কারণে শিশু-কিশোররা সবচেয়ে বিষাদের সময় পার করছে। খেলতে, ঘুরতে পারছে না তারা। স্কুল বন্ধ, তার ওপর ঘরে থাকতে থাকতে জীবন তাদের পানসে হয়ে যাচ্ছে। দম বন্ধ হয়ে আসার মতো পরিস্থিতি।
করোনাভাইরাস বিস্তারের জন্য পরিবেশ ধ্বংসকে দায়ী করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে বনভূমি নষ্ট, পাহাড় কাটাসহ সবুজ অরণ্য উজাড় করার কারণে করোনা তার উপযোগী পরিবেশ পেয়েছে, যেখানে তার বিচরণ করা খুব সহজ হয়েছে। বিশ্বের ধনী দেশগুলোসহ সব দেশকে সবুজ প্রকৃতি রক্ষার ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে, এমন তাগিদ এসেছে করোনার কারণে।
পৃথিবীতে এমন কঠিন দুঃসময় আর কখনই যেন না আসে। না আসে যেন এমন বিষাদে ভরা বছর। হয়তো আমাদের অবিচার, অনাচার আর নীতি-নৈতিকতাহীন কর্মকাণ্ডেরই ফল করোনা। অনেক হয়েছে আর নয়, এবার নিজেদের সংশোধন করতে হবে আমাদের। মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ববোধের প্রসার ঘটাতে হবে। নিরীহ ও অসহায় মানুষের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। বাড়িয়ে দিতে হবে সহযোগিতার হাত। রণসজ্জা নয়, পৃথিবীকে সুরক্ষার সরঞ্জাম তৈরি করতে হবে। বড় শক্তিগুলোকে যে কোনো আতঙ্ক সৃষ্টি ও যুদ্ধাবস্থা তৈরি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এই কঠিন সময়টি যেন আমরা দ্রুতই পার করে আবারও আগের পৃথিবীতে ফিরতে পারি. নতুন বছরে সৃষ্টিকর্তার কাছে এই হোক আমাদের প্রার্থনা। নতুন বছরে করোনামুক্ত পৃথিবীর প্রত্যাশা সব মানুষের।
কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক
khalednizamt@gmail.com
