Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

সুন্দরবনের বাঘও কি বিলুপ্ত হয়ে যাবে?

Icon

সাধন সরকার

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০১৮, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, বন-জঙ্গল ধ্বংস ও মানুষের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে অনেক বন্যপ্রাণী বহু আগেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। আবার কোনো কোনো বন্যপ্রাণী বিলুপ্তির পথে। এখন শঙ্কা দেখা দিয়েছে ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ বা বাংলার বাঘ নিয়ে। বাংলাদেশ তো বটেই, পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর ও আকর্ষণীয় প্রাণী বাঘ। বছর যাচ্ছে আর সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কমছে। বাঘের বিলুপ্তির পেছনে মূলত মানুষের নানা কর্মকাণ্ডই দায়ী।

সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ের বিভিন্ন জরিপ বলছে, গত ৪২ বছরে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। সরকারের বনবিভাগের জরিপ অনুযায়ী ২০০৪ সালে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০। একই সংস্থার জরিপে ২০১৫ সালে বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০৬। বেসরকারি বিভিন্ন জরিপেও প্রায় একইরকম তথ্য উঠে এসেছে। এ বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে যুক্তরাজ্যের কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত ‘সুন্দরবনের বাঘ সমীক্ষায়’ বলা হয়েছে, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১২১। বিভিন্ন জরিপে যে সংখ্যাই প্রকাশ পাক না কেন, এ কথা সত্য যে, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমছে।

সুন্দরবনের সৌন্দর্যের প্রতীক ও সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রাণী বাঘ কমতে থাকলে সুন্দরবন ভালো থাকবে, এমনটি মনে করার কারণ নেই। সুন্দরবন ও এর আশপাশের পরিবেশ এখন বদলে যাওয়া শুরু করেছে। ধীরে ধীরে বনের আশপাশে গড়ে তোলা হচ্ছে নানা শিল্পকারখানা। বনে চোরা শিকারির সংখ্যা বাড়ছে। বাঘের আবাসস্থল নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশে-বিদেশে বাঘের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চাহিদা থাকায় পাচারকারীরা বাঘ হত্যা করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুন্দরবনে প্রতি বছর কমপক্ষে চার-পাঁচটি বাঘ হত্যা করা হয়।

তাই সময় থাকতে বাঘ রক্ষায় আমাদের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। চোরা শিকারিদের ধরে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যেহেতু পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বন ও বন্যপ্রাণীর ওপর পড়তে শুরু করেছে, তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থেই বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করতে হবে।

বিশ্বব্যাপী বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের উদ্যোগ জোরোশোরে নেয়া হচ্ছে। ২০১০ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ‘বিশ্ব বাঘ সম্মেলনে’ ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হবে। সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সুন্দরবনে ৪৪০টি বাঘ রয়েছে, বাংলাদেশও এ সংখ্যা দ্বিগুণ করবে। কিন্তু সত্য হল, বাংলাদেশ বাঘ রক্ষায় সঠিক পথে নেই।

সুন্দরবন কেমন আছে তা বোঝা যায় বাঘের সংখ্যা দেখে। প্রয়োজনে যেসব দেশে বাঘের সংখ্যা বাড়ছে সেসব দেশের সহায়তা নেয়া যেতে পারে। বাঘ রক্ষায় ও বাঘের সংখ্যা বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নিলে সুন্দরবন থেকে বাঘ চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে বিবেচিত সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এখনই বাঘ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

সাধন সরকার : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

sadonsarker2005@gmail.com

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম