Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

কৃষকের মুখে হাসি ফোটাতে হবে

Icon

আবুল কালাম আজাদ

প্রকাশ: ০৫ মে ২০১৮, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কৃষকের মুখে হাসি ফোটাতে হবে

পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি মানুষ খাদ্যশস্য হিসেবে চালের ওপর নির্ভরশীল। চাল বাংলাদেশেরও প্রধান খাদ্যশস্য। চালে রয়েছে শ্বেতসার, প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ।

কিন্তু অজ্ঞতাবশত চালের দানাকে অতিরিক্ত মসৃণ করার কারণে এর পুষ্টিমান কমে যাচ্ছে। বস্তুত অধিক মুনাফার আশায় চালকে মসৃণ করে চালকল মালিকরা চালের পুষ্টিমান যেমন নষ্ট করছেন, তেমনি সম্প্রতি ধানের বিভিন্ন রোগ-বালাই ধান উৎপাদনে কৃষকদের মাঝে সৃষ্টি করেছে হতাশা।

দরিদ্র কৃষক টাকার অভাবে মান্ধাতার আমলের কঙ্কালসার গরু আর নড়বড়ে কাঠের লাঙ্গলের সাহায্যে জমি চাষ করে। চাষীরা বীজতলায় বীজ বপন থেকে শুরু করে ফুল আসা পর্যন্ত শ্রম ও মূলধন খাটিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে কাক্সিক্ষত ফসল ঘরে তোলার জন্য।

ধানগাছে ফুল আসার সঙ্গে সঙ্গে কত স্বপ্ন, কত আশা জন্ম নেয় কৃষকের মনে। এ বছর সারা দেশে উচ্চফলনশীল জাতের বোরো ধানের আবাদ তুলনামূলক বেশি হলেও ধান গাছের মূলশীষ ও শাখাশীষগুলো যখন ফুলে পরিপূর্ণ, ফুলগুলো দানায় পূর্ণ হয়ে শীষগুলো নিচের দিকে ঝুঁকে পড়ছে, ঠিক এমন সময় হঠাৎ করে ধানক্ষেতে দেখা দেয় একধরনের রোগ, যা শ্রীপুরের কৃষকদের ভয়াবহ আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রাথমিক অবস্থায় দু’-একটি ধানের শীষ সাদা হয়ে গেলেও অতিদ্রুত তা সব আবাদি জমিতে ছড়িয়ে পড়ে। দূর থেকে তাকালে মনে হবে ধান পেকে রয়েছে; কিন্তু একটি দানাও নেই কোনো শীষের মধ্যে। এমন দৃশ্য দেখা গেছে গাজীপুরের শ্রীপুরে। সিংগারদিঘী গ্রামের এক বর্গাচাষীকে হঠাৎ আক্রান্ত বোরো ধান ক্ষেতের পাশে বিদীর্ণ নয়নে দানাবিহীন শীষগুলোর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে দেখা যায়।

বর্গাচাষী জানান, শ্রম বিক্রি করে অতিকষ্টে সংসার চালিয়ে কিছু টাকা সঞ্চয় করে ৭০ শতাংশ জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন। বীজতলা থেকে শুরু করে ধানে শীষ আসা পর্যন্ত সন্তানের স্নেহে সব ধরনের যত্ন করেন আবাদি জমিতে।

ক্ষেতে শীষ দেখা দিলে স্বপ্ন দেখেন- ধান বিক্রি করে দায়-দেনা শোধ করবেন, সন্তানের স্কুলের খরচ মেটাবেন, হালের বলদ কিনবেন। কিন্তু অজ্ঞাত (শীষ সাদা) এক রোগে বর্গাচাষীর সেই স্বপ্ন হারিয়ে গেছে, তাই তার মুখে নেমে এসেছে হতাশার ছাপ।

গাজীপুরের অনেক বোরো চাষীরই এরকম করুণ অবস্থা। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করেও কার্যত সঠিক কোনো পরামর্শ বা প্রতিকার পায়নি কৃষকরা। কর্মকর্তাদের ধারণা, বীজে সঙ্করায়ন সমস্যা এবং মেঘাচ্ছন্ন, আর্দ্র ও উষ্ণ আবহাওয়ায় এ ধরনের রোগ হতে পারে।

কৃষক এ অবস্থায় শত চেষ্টা করেও ফসল রক্ষা করতে পারেনি, উপরন্তু যা হওয়ার তা-ই হয়েছে- কৃষকের আমও গেছে, ছালাও গেছে। চলতি বোরো আবাদে মোটা অঙ্কের লোকসানের কারণে শ্রীপুরের কৃষকরা দিশেহারা। বোরো আবাদে উৎসাহ হারাতে বসেছে চাষীরা। এ অবস্থায় শ্রীপুরের কৃষি ও কৃষককে বাঁচাতে এবং বোরো আবাদে উৎসাহ ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট আক্রান্ত ফসলি জমি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সমস্যা শনাক্তকরণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিলে আগামী বোরো মৌসুমে উপকৃত হবে কৃষকরা। ভালো বীজ চিহ্নিতকরণ, বীজতলা তৈরি, চারা তৈরি, বীজতলায় বীজ বপন, বীজতলার যত্ন, সেচ, সার প্রয়োগ এবং রোগ-বালাই দমনসহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে সরকারি উদ্যোগে গ্রামভিত্তিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে কৃষকদের সচেতন করা গেলে কাঙ্ক্ষিত ফসল পেতে পারে কৃষকরা।

আবুল কালাম আজাদ : প্রাবন্ধিক, শ্রীপুর, গাজীপুর

মতামত

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম