অত্যাধুনিক নিরাময় কেন্দ্র
মাদকাসক্তদের চিকিৎসায় এমন প্রতিষ্ঠানই কাম্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশের অনেক মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে মাদকাসক্তদের চিকিৎসার নামে নির্যাতন করা হয়। কোনো কোনো নিরাময় কেন্দ্রে মানসম্মত চিকিৎসা দূরের কথা, অপচিকিৎসা-নির্যাতনে রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। আবার কোনো কোনো নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসার নামে রোগীকে আটকে রেখে এমনভাবে নির্যাতন করা হয় যে মুক্তির পর রোগীকে সেই নির্যাতনের ক্ষত বহুদিন বয়ে বেড়াতে হয়।
এ প্রেক্ষাপটে পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি প্রশংসার দাবি রাখে। সোমবার যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পুলিশের পক্ষ থেকে এবার পরিচালিত হবে মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র। রাজধানীর অদূরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের রিভারভিউ প্রকল্পে এই প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান।
পোস্তগোলা ব্রিজ পার হয়ে এক কিলোমিটার গেলেই চোখে পড়বে ‘ওয়েসিস’ নামের এই মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র। ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠানটির সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এখন উদ্বোধনের জন্য অপেক্ষা। রোগী ভর্তির প্রস্তুতিও চলছে। সম্পূর্ণ অলাভজনক এ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হবে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে। এটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। অত্যাধুনিক এই মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের অন্যতম চমক হচ্ছে গ্যাস ক্রমোটোগ্রাফি মেডিকেল ইকুইপমেন্ট। এই মেশিনের মাধ্যমে রক্ত ও প্রস্রাব ছাড়া চুল থেকেও ডোপ টেস্ট করা যাবে।
তিন মাস আগে কেউ মাদক সেবন করে থাকলেও তা ধরা পড়বে। দেশে প্রথমবারের মতো অত্যাধুনিক এই মেশিনটি স্থাপন করা হচ্ছে। এর ফলে দ্রুততম সময়ে শতভাগ নির্ভুল রিপোর্ট পাওয়া যাবে। সাত তলাবিশিষ্ট আধুনিক এই মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র খোলা থাকবে ২৪ ঘণ্টা।
মাদক নিরাময় কেন্দ্রে প্রায়ই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। ওয়েসিস মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের রুমগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে কেউ চেষ্টা করলেও আত্মহত্যা করার সুযোগ পাবে না। কারণ কোনো রুমে সিলিংফ্যান নেই। বিশেষ ফ্যান স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে আত্মহত্যা করা সম্ভব নয়। এ প্রতিষ্ঠানের ছাদে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ গার্ডেন, যেখানে রোগীরা বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইয়োগা ও মেডিটেশন করতে পারবে। এছাড়া রয়েছে ব্যায়ামাগারসহ ইনডোর গেমসের ব্যবস্থা। আছে লাইব্রেরিও।
একটি আধুনিক পুনর্বাসন কেন্দ্রে যেসব সুবিধা থাকা দরকার এর প্রায় সবই এ প্রতিষ্ঠানে রয়েছে। রাজধানীসহ সারা দেশে বৈধ ও অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বেসরকারি মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে রোগীর কল্যাণ তথা জনস্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি বরাবরই উপেক্ষিত থেকেছে। এ প্রেক্ষাপটে উল্লিখিত উদ্যোগটি আমাদের আশাবাদী করে। দেশে এমন আরও প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে, এটাই দেখতে চায় মানুষ।
