Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

বন্যেরা বনে সুন্দর

Icon

ড. হারুন রশীদ

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বন্যেরা বনে সুন্দর

পৃথিবী থেকে অনেক বন্যপ্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে। বনের আমব্রেলা বা ছাতা হিসাবে পরিচিত হাতিও এই তালিকায়।

হাতি আকার-আকৃতিতে বড় হলেও মানুষের অবিমৃষ্যকারিতার মাশুল দিতে হচ্ছে তাকে। ফাঁদ পাতাসহ নানা উপায়ে হাতি নিধন চলছে।

এর সর্বশেষ নজির দেখা গেল টেকনাফে। পৃথিবীজুড়ে যখন বন্যপ্রাণী রক্ষায় সচেতনতা বাড়ছে, তখন কিছু মানুষের স্বার্থসিদ্ধির জন্য হাতির প্রাণ যাচ্ছে আমাদের দেশে। এ অবস্থা চলতে পারে না।

এবার টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে পানিরছড়া নামক খালে একটি মৃত হাতি পাওয়া গেল। ২৫ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কয়েকজন সদস্য মৃত হাতিটি দেখতে পান। পরে খবর পেয়ে টেকনাফে ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে বনবিভাগকে খবর দেয়।

শালবাগান এলাকার ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বেষ্টনীর বাইরে প্রায় ৫০০ গজ পশ্চিমে পাহাড়ের পাদদেশে পানির ছড়ার মধ্যে একটি মৃত বন্যহাতি দেখা যায়। ক্যাম্প এলাকায় এ খবর ছড়িয়ে পড়লে হাতিটি দেখতে ভিড় জমান উৎসুক রোহিঙ্গারা। ধারণা করা হচ্ছে, হাতিটি ৩-৪ দিন আগে পাহাড়চূড়া থেকে পড়ে মারা গেছে। এর আগে ২০ সেপ্টেম্বর টেকনাফের ঝিরিখাল থেকে আরও একটি মৃত হাতি উদ্ধার করা হয়।

ফসলের ক্ষেত নষ্ট করার অভিযোগ হাতির বিরুদ্ধে। এজন্য পাতা হয় মৃত্যুফাঁদ। ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়। উজাড় হওয়া বনে খাবার না পেয়ে ক্ষুধার্ত হাতি নেমে আসে লোকালয়ে। আর পা দেয় মানুষের তৈরি ফাঁদে। যে মানুষ হাতির মুখের খাবার কেড়ে নেয় বন উজাড় করে, তারাই আবার ফসলের ক্ষেত নষ্ট করার দায় চাপায় হাতির কাঁধে। কী নিষ্ঠুর পরিহাস! এছাড়া বিষ ও ইউরিয়া সারের কারণেও হাতির মৃত্যু হচ্ছে। অনেক সময় শারীরিক আঘাতেও মারা যাচ্ছে হাতি। ফাঁদ পাতা নিষিদ্ধ থাকলেও এর তোয়াক্কা করছে না কেউ। বনবিভাগও যথেষ্ট দায়িত্বশীল নয়।

পৃথিবীতে দুই প্রজাতির হাতি রয়েছে। এদের মধ্যে এশীয় হাতির অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। বাংলাদেশের মধুপুর গড় থেকে শুরু করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও নোয়াখালী এলাকায় একসময় হাতির অবাধ বিচরণ ছিল। বাসস্থান ধ্বংস, বন উজাড়, জনসংখ্যার চাপ, সংরক্ষণের অভাব, খাদ্যের অভাব ও চলাচলের পথে বাধার কারণে আমাদের দেশে হাতির অবস্থা সঙ্গিন। এছাড়া দাঁত, চামড়া ও মাংসের জন্য প্রতিবছর গোপনে বন্যহাতি নিধন চলছেই।

বন উজাড় করার ফলে হাতি খাদ্যের জন্য নেমে আসছে লোকালয়ে। কথায় আছে, ‘বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’। যার যেখানে থাকার কথা সেখানেই সে নিরাপদ। বন উজাড় হলে হাতি থাকবে কোথায়, খাবেই বা কী? তাছাড়া বন উজাড় করেই তো ধানক্ষেত বানানো হয়েছে। এছাড়া ফসলের ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু হাতিনিধন কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সত্যি বলতে কী, বন্যপ্রাণীর জন্য দিন দিন অসহনীয় হয়ে উঠছে তাদের আবাসস্থল। প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো আছেই, মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের কারণেও বন্যপ্রাণীরা এখন অসহায়। অব্যাহতভাবে বন ধ্বংসের কারণে খাদ্য ও বাসস্থান সংকটে পড়ে বন্যপ্রাণী লোকালয়ে এসে পড়ছে। এর ফলে দেখা দিচ্ছে নানা বিপর্যয়। এই পৃথিবী তো কেবল মানুষের জন্য নয়, অন্যান্য জীবজন্তু, বৃক্ষ, নদী-সাগর সব মিলিয়েই মানুষের জীবন। মানুষের বেঁচে থাকার স্বার্থেই সবকিছু ঠিক রাখতে হবে। হাতি যদি বেঁচে থাকে, তাহলে বনও টিকে থাকবে। আর একটি বনের টিকে থাকা মানে হাজারো জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাওয়া, পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য ঠিক থাকা। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। হাতির মৃত্যু রোধে নিতে হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।

ড. হারুন রশীদ : সাংবাদিক, কলামিস্ট

drharun.press@gmail.com

 

বন্যেরা বনে. সুন্দর.

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম