Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

রাজাকারের তালিকা

আইন সংশোধনীর উদ্যোগের দ্রুত বাস্তবায়ন কাম্য

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাজাকারের তালিকা

রাজাকারদের তালিকার আইনি রূপ দিতে ২০০২ সালের জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনে সংশোধনী আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল দুই বছর আগে।

পরিতাপের বিষয়, সংশোধনীটি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সদস্যদের আনুষ্ঠানিক তালিকা প্রকাশের বিষয়টি আটকে আছে।

আমরা জানি, ইতঃপূর্বে রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তি কমিটিসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল এবং একে রাজাকারের প্রথম তালিকা বলা হয়েছিল। তবে তালিকাটি বিতর্কমুক্ত করা যায়নি।

এতে মুক্তিযোদ্ধা তো বটেই, খোদ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলির নামও এসেছিল। সে সময় আমরা এই আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলাম যে, প্রয়োজনে কিছুটা বেশি সময় নিয়ে হলেও নির্ভুল ও বিতর্কমুক্ত একটি তালিকা তৈরি করা হোক।

কারণ এ ধরনের একটি স্পর্শকাতর তালিকা তৈরিতে যথাযথ যাচাই-বাছাই হওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া জটিলতা এড়াতে রাজাকারের তলিকার আইনি রূপ দেওয়ার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুত এ উদ্দেশ্যেই জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনে সংশোধনী আনা হচ্ছে। তবে সেই প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হওয়া উচিত নয়।

মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে যারা সহযোগিতা করেছিল, তারা সাধারণভাবে রাজাকার নামে কুখ্যাত হয়ে আছে। পাকিস্তানিদের সহযোগী আরও দুটি সংস্থার নাম ছিল আলবদর ও আলশামস। রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানিদের দ্বারা সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি নানা অপকর্মে সহযোগিতা প্রদান করলেও দীর্ঘ ৫০ বছরে তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা সম্ভব হয়নি।

ফলে দেশদ্রোহী ও মানবতাবিরোধী এসব অপরাধীর অনেকেই বিচার প্রক্রিয়ার বাইরে থেকে গেছে, কেউবা আবার কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকার পর নানা কৌশলে সমাজে পুনর্বাসিত হয়েছে।

এমনকি রাজাকার, আলবদর বাহিনীর শিরোমণিদের কেউ কেউ মন্ত্রিত্বও লাভ করেছিল। এ পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতার বহু বছর পর হলেও রাজাকারদের তালিকা তৈরির যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।

তবে রাজাকারদের তালিকা প্রকাশের উদ্যোগ যাতে বিতর্কমুক্ত অবস্থায় বাস্তবায়িত হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে দেশে প্রচুর বিতর্ক হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও তালিকাভুক্ত হয়ে সরকারি ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন, এমন লোকের সংখ্যা কম নয়। এমনকি সরকারি উচ্চপর্যায়ের অনেকেই চাকরিতে বাড়তি সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সেজেছেন।

আমরা মনে করি, রাজাকারের তালিকা তৈরিতে যাতে কোনো গলদ না থাকে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা সচেতন থাকবেন। প্রকৃতই যারা পাকিস্তানিদের সহযোগিতা করেছে অথবা মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল, তারাই যেন শুধু তালিকাভুক্ত হয়। ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থে কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যাতে তালিকা তৈরি না হয়, সে ব্যাপারে শতভাগ সততার পরিচয় দিতে হবে সংশ্লিষ্টদের।

জাতি প্রকৃত অপরাধীদের পরিচয় ও তাদের শাস্তি দেখতে চায়। ১৯৭১ সালে রাজাকার, আলবদর, আলশামসসহ বিভিন্ন বাহিনীর স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা ছিল।

এক্ষেত্রে যেহেতু একেক বাহিনীর একেক রকম ভূমিকা ছিল, সেহেতু প্রতিটি নিপীড়ক বাহিনীর আলাদা আলাদা তালিকা হওয়া উচিত।

আমরা আশা করব, সরকার পর্যায়ক্রমে সেদিকেই অগ্রসর হবে এবং অপরাধের ধরনসহ কোন বাহিনীর কী ভূমিকা ছিল, সেটি স্পষ্ট করে স্বয়ংসম্পূর্ণ তালিকা প্রস্তুত করবে, যাতে করে মুক্তিযুদ্ধের নির্ভুল ইতিহাস তৈরি হয় এবং ভবিষ্যতে ইতিহাস বিকৃতির সুযোগ না থাকে।

রাজাকার. তালিকা.

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম