Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম

ভুল-ত্রুটি কাটিয়ে উঠতে হবে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম

বছরের শুরুতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূর বই বিতরণল্যেকে সরকারের একটি বড় সাফল্য হিসাবে দেখা হয়। এবার করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠ্যপুস্তক উৎসব নেই বটে; তবে শনিবার থেকেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার ১৩ দিনব্যাপী কার্যক্রম যথারীতি শুরু হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

উল্লেখ্য, সরকার এ বছর প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত অন্যূন ৩৫ কোটি বই মুদ্রণের পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে প্রাথমিক স্তরের ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭৪টি এবং মাধ্যমিকের ২৪ কোটি ৭১ লাখ ৬৩ হাজার ২৫৬টি বই রয়েছে। মাঠপর্যায়ে বই বিতরণের দায়িত্ব মূলত মাউশির। অভিযোগ রয়েছে, এ বছর বই মুদ্রণের ক্ষেত্রে বেহাল দশা বিরাজ করার বিষয়টি আড়াল করতে করোনার দোহাই দিয়ে একটানা ১৩ দিন ধরে বই বিতরণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। অনেকের আশঙ্কা, এ বছর প্রয়োজনীয়সংখ্যক বই মুদ্রণ সম্পন্ন হতে গোটা জানুয়ারি মাস লেগে যেতে পারে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা সব বই একসঙ্গে নাও পেতে পারে, যা মোটেই কাম্য নয়।

অপ্রিয় হলেও সত্য, মুদ্রাকরদের একটি অংশ ইচ্ছা করেই বই মুদ্রণে বিলম্ব করে। এর অন্তর্নিহিত কারণ হলো, যখন ১ জানুয়ারি চলে আসে, তখন এনসিটিবি বইয়ের মানের চেয়ে সরবরাহের দিকে অধিক গুরুত্ব দেয়। এতে নিুমানের কাগজে বই সরবরাহের পথ সুগম হয়। বস্তুত সাড়ে ৩ কোটি বই সরবরাহে বিলম্ব ঘটার এটাও একটি বড় কারণ। যদিও করোনাকালীন ব্যবস্থা অনুযায়ী নতুন পাঠ পরিকল্পনায় যেসব ক্লাস নির্ধারিত রয়েছে, তাতে সব বই একসঙ্গে হাতে না পেলেও সংকট হবে না বলে আশ্বস্ত করা হচ্ছে; তারপরও আমরা আশা করব, নতুন বই নিয়ে কোনোরকম অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে না।

নতুন শ্রেণিতে নতুন বই পড়া ও বিনামূল্যে সেগুলোর পাওয়ার আনন্দই আলাদা। সবচেয়ে বড় কথা, প্রতিবছর বই বিতরণকে কেন্দ্র করে কোটি কোটি কোমল প্রাণে যে উৎসবের ছোঁয়া লাগে, তাতে এক ধরনের সার্বজনীনতা রয়েছে। অনেক দরিদ্র পরিবার সন্তানদের নতুন বই কিনে দেওয়ার সামর্থ্য রাখে না। ফলে সেসব পরিবারের শিক্ষার্থীদের পুরোনো বই দিয়েই বছর পার করতে হতো। তবে টানা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সরকার বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করায় বছরের শুরুতেই এখন সবার হাতে থাকে নতুন বই। অতীতে বিতরণ করা কিছু বইয়ে মুদ্রণ বিভ্রাট ছাড়াও ছাপার মান খারাপ হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। একইসঙ্গে এ কথাও স্বীকার্য যে, বিশাল এ কর্মযজ্ঞে কিছু ভুল-ত্রুটি থাকতেই পারে, দেখা দিতে পারে বিপত্তি। এছাড়া এক্ষেত্রে ব্যক্তিবিশেষের ব্যর্থতা ও দুর্নীতির অভিযোগও থাকতে পারে। কিন্তু তারপরও মনে রাখা জরুরি, মুষ্টিমেয় কিছু লোকের ব্যর্থতা, দুর্নীতি এবং ভুল-ত্রুটিগুলো শুধরে কীভাবে এ কার্যক্রম সর্বতোভাবে সফল করা যায়, সে উপায় অনুসন্ধান করতে হবে। আমাদের মতে, বিনামূল্যের বইয়ের পাশাপাশি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়াসহ অন্যান্য সমস্যার প্রতিকারে যদি সরকার আন্তরিক হয়, তাহলে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার ভিত শক্তভাবে গড়ে উঠবে।

বই

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম