Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

প্রত্যেকে হোক পরের তরে

Icon

আবদুল্লাহ আল মাউন

প্রকাশ: ২৫ মে ২০১৮, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রত্যেকে হোক পরের তরে

প্রত্যেকে হোক পরের তরে। ছবি: যুগান্তর

পল্লীকবি জসীমউদ্দীন শুধু পল্লীর ছেলেমেয়েদের আর পল্লীর আঁকাবাঁকা মেঠো পথকেই ভালোবাসতেন না, তিনি ভালোবাসতেন মানবসমাজে অনাহারি, দুঃখী-ক্ষুধার্ত মানুষকেও, যেমনটি ফুটে উঠেছে তার ‘সবার সুখে’ কবিতায়। কবিতার কয়েকটি লাইন এরকম- ‘সবার সুখে হাসব আমি, কাঁদবো সবার দুখে, নিজের খাবার বিলিয়ে দিব অনাহারির মুখে।’

তার এই কবিতার লাইন আমাদের গভীরভাবে স্মরণ করিয়ে দেয় মানুষের প্রতি কবির ভালোবাসার কথা। আজ থেকে বহু বছর আগেই কবি চিন্তা করেছিলেন- মানুষ হিসেবে আমাদের উচিত প্রত্যেক মানুষের সুখের দিনে তাদের পাশে থেকে আনন্দ ভাগাভাগি করার কথা। মানুষের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন কবি।

নিজের সুখকে বিসর্জন দিয়ে অপরের মুখে হাসি ফোটানোর উদ্দেশ্যে আমরা কতজন পেরেছি সমাজের পিছিয়ে থাকা মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করতে? এখন তো পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, নিজের খাবার অন্যকে বিলিয়ে দেয়া তো দূরের কথা, বরং অন্যের মুখের খাবার কেড়ে নেয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়।

রমজান আসতে না আসতেই একশ্রেণীর অসাধু মুনাফালোভী ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগে ফেলে দিয়েছে। অথচ রমজান উপলক্ষে আরব দেশগুলোয় পণ্য মূল্যছাড়ের হিড়িক চলে, যেন রোজাদারদের কোনো কষ্ট না হয়। আর বাংলাদেশে দেখা যায় এর উল্টোটি।

বলা যায়, পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে মানুষের মুখের খাবার কেড়ে নেয়া হচ্ছে এখানে। নিুআয়ের মানুষ ইচ্ছা করলেও ভালো কিছু খেতে পারে না।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সুবাদে প্রায়ই রাতে ট্রেন ভ্রমণের সুযোগ হয়ে থাকে। শেষরাতে যখন ভৈরব বাজার স্টেশনে নামি, তখন দেখি কেউ খোলা আকাশের নিচে, কেউ স্টেশনের বারান্দায়, আবার কেউ কাঁথা-বালিশ ছাড়াই ঘুমাচ্ছে।

তখন ভাবতে থাকি, মধ্যম আয়ের এ দেশে এখনও মানুষ না খেয়ে থাকে, এখনও মানুষ রাত কাটায় খোলা আকাশের নিচে! অথচ একশ্রেণীর মানুষ বিলাসী জীবন কাটায়; তাদের বাড়ি-গাড়ি, টাকা-পয়সার ছড়াছড়ি।

যদি সমাজের ধনবানরা গরিব এবং পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করত, তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিত, তাহলে এই হতদরিদ্র মানুষগুলো দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পেতে পারত। অনেকে অবশ্য স্বল্পপরিসরে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। তবে তা গরিবের জীবনে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। গরিব গরিবই থেকে যাচ্ছে।

আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত কবির মতো করে চিন্তা করা। কবির মতো মানুষকে ভালোবাসা। প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে নিজে খাওয়ার মাঝে, বিলাসিতার মাঝে আসলে তৃপ্তি পাওয়া যায় না, প্রকৃত তৃপ্তি তখনই পাওয়া যায় যখন কারও প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া হয়। তবেই আমরা নিজেদের সুখী বলে দাবি করতে পারব। সবার সুখে হাসতে পারব, আবার দুঃখে কাঁদতেও পারব।

আবদুল্লাহ আল মাউন : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

 

পল্লীকবি জসীমউদ্দীন আঁকাবাঁকা মেঠো পথ ধনবান গরিব

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম