নিউমার্কেট হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা শনাক্ত
অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গত ১৯ এপ্রিল রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষ ও দুজনের নিহতের ঘটনায় জড়িত অস্ত্রধারী ছয়জনের নাম-পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। তারা সবাই ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। এর মধ্যে ভিডিও ফুটেজে ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী নাহিদ হোসেনকে কুপিয়ে জখম করতে দেখা গেছে যে হেলমেটধারী তরুণকে, তার নাম বাশার ইমন। তাকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, ১৮ এপ্রিল রাতে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। নিউমার্কেটে দুটি খাবারের দোকানে দুই কর্মীর বিতণ্ডা থেকে ঘটনার সূত্রপাত। এর জেরে পরদিন ১৯ এপ্রিল দিনভর নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষ হয়। ঘটনায় কুরিয়ার সার্ভিস কর্মী নাহিদ হোসেন এবং দোকানকর্মী মোহাম্মদ মুরসালিন নিহত হন। ঘটনার পর নিউমার্কেট থানায় বাদী হয়ে মামলা করে পুলিশ। মামলায় মকুবল হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে প্রধান আসামি করাসহ মোট ২৪ জনকে আসামি করা হয়, যাদের সবাই নিউমার্কেট এলাকার বিএনপি নেতাকর্মী। এতে প্রশ্ন ওঠে, ঘটনার ভিডিও ফুটেজ না থাকলে এবং গণমাধ্যমে ছবি প্রকাশিত না হলে মামলার এ আসামিদেরই অপরাধী হিসাবে শাস্তি পেতে হতো কি না। তবু স্বস্তির বিষয়, শেষ পর্যন্ত প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করা গেছে, তাদের আড়াল করার চেষ্টা হয়নি অথবা আড়াল করার চেষ্টা সফল হয়নি।
ভিডিও ফুটেজে নিরীহ কুরিয়ার সার্ভিস কর্মী নাহিদকে যেভাবে কুপিয়ে রক্তাক্ত করতে দেখা গেছে, তা ২০১২ সালে পুরান ঢাকার নিরীহ পথচারী বিশ্বজিৎ দাসের নৃশংস হত্যার ঘটনা মনে করিয়ে দেয় আমাদের। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী। বিশ্বজিৎ হত্যার ঘটনায় সরকার দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিল। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছিল। কাজেই ছাত্রলীগ নামধারী এ ধরনের নেতাকর্মীদের সংগঠন থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে সরকার দ্রুত উদ্যোগী হবে বলে মনে করি আমরা। নিউমার্কেট এলাকার সংঘর্ষের ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে যারা নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এটাই সময়।
আমরা লক্ষ করছি, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে নৃশংস হত্যার প্রবণতা বেড়ে গেছে। মানুষকে নির্দ্বিধায় কুপিয়ে, পুড়িয়ে, গলা কেটে হত্যা করা হচ্ছে। কেন এই উন্মত্ততা? হত্যাকারীরা কোনোকিছুই পরোয়া করছে না যেন। মানুষ কেন এত বেপরোয়া হয়ে উঠছে, কেন সামান্যতেই তাদের মধ্যে জেগে উঠছে জিঘাংসা-এটা এক বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে প্রতিকারের ব্যবস্থা না নিলে মানুষের এ নৃশংসতা রোধ করা যাবে না। বিচারহীনতার সংস্কৃতি যে হত্যাকাণ্ড বৃদ্ধির অন্যতম কারণ, সে কথা অনস্বীকার্য। তাই অপরাধ দমনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথা বলা হয়ে থাকে। তবে শুধু দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অপরাধ দমনে পুরোপুরি কার্যকর নয় বলেই প্রতীয়মান। আসলে প্রয়োজন সমাজে সর্বব্যাপী এক বড় সাংস্কৃতিক আন্দোলন, যে আন্দোলন মানুষকে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন করে গড়ে তুলবে। মানুষের মধ্য থেকে পাশবিক প্রবৃত্তির অবসান ঘটাবে।
