ওষুধের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি
কঠোর বাজার মনিটরিং দরকার
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ যখন দিশেহারা, ঠিক তখন ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি তাদের ফেলেছে বাড়তি চাপের মুখে। সরকার ৫৩ ধরনের ওষুধের দাম বেঁধে দিলেও খুচরা বিক্রেতাদের অনেকেই তা মানছেন না।
ওষুধের বাড়তি মূল্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সম্প্রতি সরকার ওষুধের দাম ১৩৪ শতাংশ বাড়িয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ওষুধ। কিছু ওষুধের দামের ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো যে প্রস্তাব করেছে, সরকার তার চেয়ে বেশি মূল্য বেঁধে দিয়েছে-এমন ঘটনাও আছে।
এসব কারণে আগে যে দামে ওষুধ কেনা যেত, এখন এর চেয়ে অনেক বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে রোগীদের। আবার খোলাবাজারে একই ওষুধের দামে ভিন্নতা রয়েছে। এছাড়া গ্রামের দুর্গম এলাকায় মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিুমানের এবং ভেজাল ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। ওষুধের দামে যখন এই অরাজকতা, তখন বাজার নিয়ন্ত্রণে নেই নিয়মিত নজরদারি। এই সুযোগে ফার্মেসির মালিকরা নিজেদের খেয়ালখুশি মতো ওষুধের দাম নিচ্ছেন।
সরকারি হাসপাতালগুলোয়ও ওষুধ কেনায় রয়েছে দুর্নীতি। এ অবস্থায় উচ্চমূল্য জোগাড়ে ব্যর্থ হয়ে অনেক রোগী দীর্ঘশ্বাস চেপে ফার্মেসি ও হাসপাতাল থেকে শূন্য হাতে ফিরে যাচ্ছেন। কেউ কেউ কিছু ওষুধ কিনলেও বাকিগুলো খাওয়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন ছেড়ে দেওয়া হলে দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে, যা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় সুদূরপ্রসারী
চ্যালেঞ্জ বাড়াবে।
উল্লেখ করা যেতে পারে, ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কেবল প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবহার্য ১১৭টি জেনেরিকের ওষুধের দাম বাড়াতে পারে। বাকিগুলোর দাম উৎপাদনকারী ও আমদানিকারকরা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সর্বদিক বিস্তৃত কঠোর মনিটরিংয়ের অভাবে এ খাতে চলছে নৈরাজ্য। ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব বলেছেন, ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামালের দাম বেড়েছে।
প্যাকেজিং মেটেরিয়ালস, পরিবহণ ও সরবরাহ ব্যয়, জ্বালানি তেলের দাম, ডলারের বিনিময় মূল্য ও মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। ফলে ওষুধের দাম বাড়াতে হচ্ছে। আমাদের কথা হলো, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ওষুধের দাম কিছুটা বাড়তে পারে বটে, তবে যে হারে তা বাড়ছে, তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। ওষুধের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
উপায়ান্তর না দেখে অনেকে ঝুঁকবে ঝাড়ফুঁক ও টোটকা চিকিৎসার দিকে। এতে দেশের স্বাস্থ্যসেবা মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। চিকিৎসা মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। সরকারের দায়িত্ব জনগণের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা নিরসনে উদ্যোগী হতে হবে সরকারকে।
ওষুধ কোম্পানিগুলোর অতি মুনাফা প্রবণতার কথা জানি আমরা। তারা দফায় দফায় দাম বাড়াতে অভ্যস্ত। তাদের এই অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। দ্বিতীয় কথা, যেসব ওষুধের চাহিদা বেশি, সেগুলোর উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়িয়ে বাজারে ওষুধের সংকট দূর করতে হবে। দেশে ওষুধশিল্প একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে দেশে উৎপাদিত ওষুধ।
এ খাতের প্রসার ঘটলে সার্বিকভাবে লাভবান হবে দেশের অর্থনীতি। সেজন্য ওষুধশিল্পের বিকাশে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে এটাই কাম্য। শেষ কথা, ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
