অনন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
আহমেদ সুমন
প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০১৮, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: বার্ডস আই ভিউ। ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গতকাল ১২ জানুয়ারি ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ২০০১ সাল থেকে এ দিনটিকে কর্তৃপক্ষ ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল বায়েস ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ পালনের প্রচলন করেন। তৎকালীন সিনেট সদস্য অধ্যাপক ড. এমএ মতিন বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে ১২ জানুয়ারি দিনটিকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব করেন।
বলা যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স স্বাধীন বাংলাদেশের সমান। ১৯৬৭ সালে ঢাকা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে সাভার এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্থান নির্বাচন করা হয়। এর পাশে রয়েছে ডেইরি ফার্ম, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সাভার সেনানিবাস ও জাতীয় স্মৃতিসৌধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্পপ্রধান হিসেবে ড. সুরত আলী খানকে নিয়োগ করা হয়। ১৯৭০ সালের ২০ আগস্ট পূর্ব পাকিস্তান সরকার এক অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে এ নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রাখে ‘জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়’। ১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসাবে যোগ দেন বিশিষ্ট রসায়নবিদ অধ্যাপক ড. মফিজউদ্দিন আহমদ। ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম আহসান আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় উদ্বোধন করেন। তবে এর আগেই ৪ জানুয়ারি অর্থনীতি, ভূগোল, গণিত ও পরিসংখ্যান বিভাগে ক্লাস শুরু হয়। প্রথম ব্যাচে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ১৫০। স্বাধীন বাংলাদেশে জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট পাস করা হয়। এ অ্যাক্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রাখা হয় ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়’। ৬৯৭.৫৬ একর ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৫টি অনুষদের অধীনে ৩৩টি বিভাগ চালু আছে। এছাড়া ইন্সটিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইআইটি), ইন্সটিটিউট অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ-জেইউ), ইন্সটিটিউট অফ রিমোট সেন্সিং ও ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। আবাসিক হল ১৬টি। এর মধ্যে ৩টি নির্মাণাধীন। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৫ হাজার।
৪৭ বছরের পথপরিক্রমায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণার নানা ক্ষেত্রে অনন্য নজির স্থাপন করেছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ বিশ্ববিদ্যালয় দেশের মধ্যে প্রথম কিছু করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিযুক্তির মাধ্যমে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম নারী উপাচার্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। বিশ্বমানের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র ’ নির্মাণের মাধ্যমে বিজ্ঞান চর্চার অনন্য সুযোগ তৈরি করা হয়েছে এখানে। সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির এ গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেনের তত্ত্বাবধানে এখানে কীটপতঙ্গের জিনের ডিএনএ বারকোডিং করা হচ্ছে, যা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম খোলা হয়। এ দুটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা স্ব স্ব ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মুক্তমঞ্চ’ বাংলাদেশ তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম, যা উপাচার্য অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর সময়ে নির্মাণ করা হয়। ১৯৮০ সালে সেলিম আল দীন রচিত ‘শকুন্তলা’ নাটক মঞ্চায়নের মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু হয়। দেশে পুতুল নাচের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণার জন্য পুতুল নাট্য গবেষণা কেন্দ্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম খোলা হয়েছে। প্রাকৃতিক জলাধার এবং অতিথি পাখির অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠায়ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নজির স্থাপন করেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রথম পাখিমেলা ও প্রজাপতি মেলার আয়োজন করা হয়। এ রকম নানাদিক থেকেই এ বিশ্ববিদ্যালয় দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে।
আহমেদ সুমন : গবেষক; সাধারণ সম্পাদক, জাবি সাংবাদিক সমিতি, সেশন-১৯৯৮
asumanarticle@gmail.com
