Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

দুর্নীতির বিস্তার

লুটপাটের সংস্কৃতি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিন

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দুর্নীতির বিস্তার

গত বছর দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সর্বোচ্চসংখ্যক ১১ হাজার ৭৯৬টি অভিযোগ সরাসরি জমা দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। এছাড়া সরকারি দপ্তর ও সংস্থা থেকে ৯৬৭টি, বেসরকারি সংস্থা ও দপ্তর থেকে ৩৮৭টি, গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশিত প্রতিবেদন ১ হাজার ৩৫৪টি, দুদকের বিভাগীয় কার্যালয়ে ১ হাজার ৫৪৭টি, হটলাইন ও এনফোর্সমেন্ট বিভাগে ৫৮০টি এবং আদালত, ই-মেইল ও ফেসবুকসহ অন্যান্য সোর্স থেকে এসেছে আরও ২ হাজার ৭০৭টি অভিযোগ। তবে দুদকের পরিসংখ্যানমতে, ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগের মধ্য থেকে অনুসন্ধানের জন্য আমলে নেওয়া হয়েছে মাত্র ৯০১টি। এ হিসাবে প্রাপ্ত মোট অভিযোগের শতকরা ৯৬ ভাগই অনুসন্ধানের জন্য আমলে নেয়নি দুদক। অবশ্য এক্ষেত্রে দুদদকের ভাষ্য হলো, প্রতিদিন নানা সোর্স থেকে দুদক কার্যালয়ে জমা হওয়া অভিযোগ নিয়ম অনুযায়ী যথাযথ প্রক্রিয়ায় পর্যবেক্ষণ ও যাচাই-বাছাই শেষে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ প্রেক্ষিতে জমাকৃত অনেক অভিযোগ তফশিলভুক্ত না থাকায় অনুসন্ধানের জন্য আমলে নেওয়া যায়নি। এ কথা সত্য-এমন অনেক অভিযোগ জমা পড়ে, যেগুলো দুদকের এখতিয়ারভুক্ত নয়। আবার ভিত্তিহীন কিংবা শত্রুতাবশত অভিযোগ জমা দেওয়ার ঘটনাও ঘটে থাকে। এক্ষেত্রে সামগ্রিক বিষয় ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হলে একজন অভিযোগকারীর অভিযোগ কেন আমলে নেওয়া হলো না, সেটি তিনি জানতে পারবেন। এর ফলে দুদকের কাজের স্বচ্ছতা সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা পাবে সাধারণ মানুষ, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

উদ্বেগজনক হলো, দেশে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে লুটপাটের যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তা রাষ্ট্রের মূল ভিত নড়বড়ে করে দিচ্ছে। এ অবস্থায় দুর্নীতি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। দারিদ্র্য বিমোচন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে মধ্যম আয়ের (উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় যেতে অগ্রগতি অর্জন) দেশে পরিণত হওয়াসহ অন্যান্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন আশাপ্রদ হলেও দুর্নীতির ব্যাপ্তি সবকিছু গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছে, যা থেকে মুক্তি পাওয়া জরুরি। বলার অপেক্ষা রাখে না, লাগামহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার খর্ব করছে এবং এর ফলে প্রান্তিক ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী ক্ষতির শিকার হচ্ছে। দুর্নীতি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে মানুষের মৌলিক অধিকার অর্জনে বড় বাধা, তা বলাই বাহুল্য। এসব অধিকার রক্ষায় সরকারের আন্তরিক ভূমিকা কাম্য হলেও উদ্বেগের বিষয় হলো, এ ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে কার্যকর ও দৃশ্যমান শক্ত কোনো পদক্ষেপ লক্ষ করা যাচ্ছে না। বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সর্বশেষ প্রকাশিত ধারণা সূচকে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। সরকারের উচিত-দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা। এটা করা সম্ভব হলে দুর্নীতি কমবে; একই সঙ্গে দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ পাচারও বন্ধ হবে, যা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে। দেশে যে হারে দুর্নীতি বিস্তার লাভ করছে, সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন চাইলে এর মূলোৎপাটন জরুরি। এ জন্য শক্ত হাতে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা ও সদিচ্ছা থাকা প্রয়োজন। দেশ থেকে দুর্নীতি হটাতে হলে আইনের পাশাপাশি জনসচেতনতা গড়ে তোলাও প্রয়োজন। দেশের মানুষ যদি দুর্নীতির কুফল সম্পর্কে অবহিত হয়ে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, তবে সমাজ থেকে দুর্নীতি নির্মূল হবে বলে আশা করা যায়।

দুর্নীতি বিস্তার

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম