Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

ভাষাসংগ্রামীদের তালিকা

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুত প্রণয়ন করা উচিত

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভাষাসংগ্রামীদের তালিকা

বায়ান্নর মহান ভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও তৈরি হয়নি ভাষাসৈনিক বা ভাষাসংগ্রামীদের তালিকা-বাঙালি হিসাবে এটি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমাদের জন্য। অথচ ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য অত্যন্ত ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী।

এ আন্দোলনের ফলে আমাদের মাতৃভাষা হিসাবে বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশের সীমানা পেরিয়ে ভাষা আন্দোলন শুধু বাংলা ভাষাভাষীদের নয়, আজ বিশ্বের সব ভাষাভাষীর অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে।

বস্তুত ভাষা আন্দোলন এবং এর মূল চেতনা এখন বাংলাদেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিস্তৃত। এ ভাষা আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা নগরী হলেও ইতিহাস বলে, সেদিন এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল দেশের বিভিন্ন স্থানে।

বাংলা ভাষার অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অনেকেই ১৯৫২ সালে এবং এর আগে ও পরে অংশ নিয়েছিলেন। অবদান রেখেছিলেন নানাভাবে। তাদের নামের কোনো তালিকা না থাকার অর্থ হলো তাদের সেই অবদানের স্বীকৃতি না দেওয়া। তাই ভাষাসংগ্রামীদের তালিকা প্রণয়ন রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

আমাদের জানামতে, ভাষাসৈনিকদের তালিকা তৈরির আবেদন জানিয়ে ২০১০ সালে হাইকোর্টে একটি রিট হয়েছিল। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ২৫ আগস্ট ভাষাসৈনিকদের তালিকা তৈরি, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের পাশে একটি গ্রন্থাগার ও ভাষা জাদুঘর নির্মাণসহ আট দফা নির্দেশনা দেন।

হাইকোর্টের নির্দেশনায় ঢাকায় জাতীয়ভাবে এবং জেলায় জেলায় কমিটি গঠন করে ভাষাসৈনিকদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছিল। এর আলোকে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে একটি তালিকা তৈরি করেছিল, যেখানে ৬৮ জন ভাষাসংগ্রামীর নাম ছিল। তালিকাটি ২০১২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। কিন্তু এ তালিকার কিছু নাম নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। তাছাড়া এটি পূর্ণাঙ্গ তালিকাও ছিল না।

এ পরিপ্রেক্ষিতে তালিকা প্রণয়নের কাজটি স্থগিত করা হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশনায় ঢাকাসহ দেশের সব জেলায় কমিটি গঠন করে তালিকা তৈরি করতে বলা হয়। এ প্রেক্ষাপটে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঢাকায় তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। কিন্তু এ কমিটির মাত্র একটি বৈঠক হওয়ার পর তালিকা প্রণয়নের কাজটি কার্যত বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি সরকারিভাবে সম্পন্ন করার আর কোনো উদ্যোগও নেওয়া হয়নি।

এ অবস্থায় আমরা মনে করি, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলায় জেলায় কমিটি গঠন করে এবং তা সমন্বয়ের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করে ভাষাসংগ্রামীদের যথাসম্ভব একটি নির্ভুল, নির্মোহ ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করা উচিত।

ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই আজ আর বেঁচে নেই। যারা বেঁচে আছেন, তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের সময়ও দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। কাজেই ভাষাসংগ্রামীদের তালিকা প্রণয়ন নিয়ে গাফিলতির সুযোগ নেই। ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব ও ব্যাপকতা বিবেচনায় নিয়ে এ বিশাল কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি এখনই শুরু করা উচিত। এ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় সুষ্ঠুভাবে সমন্বয়ের জন্য একটি স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় গঠন করার কথাও বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে এ সবকিছুর আগে ভাষাসংগ্রামী হিসাবে কাদের স্বীকৃতি দেওয়া হবে, সে বিষয়ে একটি সঠিক ব্যাখ্যা থাকা প্রয়োজন বলে মনে করি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম