Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

প্লাস্টিকের ক্ষতি

Icon

আবু সালেহ মোহাম্মদ সায়েম

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০১৮, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্লাস্টিকের ক্ষতি

ছবি: সংগৃহীত

প্লাস্টিক পুরো বিশ্বেই বহুল ব্যবহৃত একটি সামগ্রী। প্লাস্টিকের গামলা, বালতি, চায়ের কাপ, স্ট্র, পানির বোতল, কোমল পানীয়ের পাত্র ইত্যাদি রান্নাঘরের কোণ থেকে শুরু করে ঘর-গৃহস্থালির সব জায়গাতেই ব্যবহার হয়। এমনকি জুস কিংবা চা সরবরাহের জন্য হোটেলগুলোতে প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার হয়ে থাকে।

অনেকেই বাসাবাড়িতে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য রাখা বা গরম করার ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের পণ্য ব্যবহার করে থাকেন। অপেক্ষাকৃত সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় প্রতিদিন আমরা নানাভাবে প্লাস্টিকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছি।

বিশেষ করে ওয়ান-টাইম ইউজ প্লাস্টিক (বোতল, কাপ, প্লেট, বক্স, চামচ, স্ট্র) দ্রব্যের ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। মাছ-মাংস, শাক-সবজি, ডাল, চিনি, রসগোল্লা ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য শোভা পাচ্ছে প্লাস্টিকের মোড়কে।

আকার ও ওজনে সুবিধাজনক হলেও প্লাস্টিকের বোতল স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তা সত্ত্বেও প্লাস্টিকের বোতলে শুধু পানি, তেল, সস, বা জুস নয়, ওষুধ পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। অবস্থা দেখে মনে হয় এটা প্লাস্টিকের যুগ। শুধু শহরেই নয়, গ্রামগঞ্জেও এ অবস্থা দৃশ্যমান।

প্লাস্টিকের পাত্রে খাওয়া বা কোনো কিছু গরম করার মারাত্মক ক্ষতিকর দিক রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্লাস্টিকের পাত্রে কিছু গরম করা এবং প্লাস্টিকের বোতলে পানি পান করা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। প্লাস্টিকের বোতলে থাকা রাসায়নিক পদার্থ খাবারের মধ্যে চলে যায়।

এটি খাবার থেকে শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে। শুধু তাই নয়, প্লাস্টিকের পাত্রে খাবার গরম করলে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান বের হয়ে খাবারের মধ্যে প্রবেশ করে। এর ফলে ক্রমাগত বাড়ছে ক্যান্সার, অ্যাজমা, অটিজম, হরমোনজনিত সমস্যা, গর্ভপাতসহ নানা জটিল রোগ।

এছাড়াও প্লাস্টিকের পাত্রে খাবার খেলে বেশকিছু ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।

প্লাস্টিক শুধু স্বাস্থ্যেরই ক্ষতি করছে না, একইসঙ্গে বায়ু দূষণ করছে এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। প্লাস্টিক দ্রব্য অপচনশীল। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা প্লাস্টিকের পৃথিবী রেখে যাচ্ছি। যে প্লাস্টিক আমরা ব্যবহার করে ফেলে দেই, সেই প্লাস্টিক চলে যায় ড্রেন, খাল-বিল, নদী-নালা, সমুদ্রে।

অনেক মাছ ও সামদ্রিক প্রাণী সেসব প্লাস্টিক দ্রব্য খায়। অনেক ক্ষেত্রে প্লাস্টিক পণ্য হজম করতে না পেরে কিংবা প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাবে সামুদ্রিক প্রাণী মারা যাচ্ছে।

বিশ্বে প্রতি মিনিটে প্রায় ৫ লাখ প্লাস্টিক বোতল বিক্রি হয়। বোতলটির প্রয়োজনীয়তা শেষ হওয়া সত্ত্বেও আমরা তা ফেলে না দিয়ে অনবরত ব্যবহার করে যাই। এর মধ্যে পানি ভরাট করে ফ্রিজিং করি মাসের পর মাস অথবা আদরের সন্তানকে স্কুলের পানি সরবরাহে ব্যবহার করি। প্লাস্টিকের বোতল পরিষ্কার দেখালেও মোটেই পরিষ্কার নয়।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, পানি ভর্তি বোতলে প্রতি তিনদিনে প্রায় ৩ লাখ ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয় প্রতি বর্গ সেন্টিমিটারে। একে তো ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ, অন্যদিকে ব্যাকটেরিয়া।

সব দিক বিবেচনা করে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের বুন্ডানন শহর কর্তৃপক্ষ প্লাস্টিকের বোতলে পানির বিপণন চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ২০০৯ সালে। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকেই আমেরিকার বিভিন্ন শহরে প্লাস্টিক বোতলজাত পানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

পৃথিবীর অনেক দেশের সরকার এই ক্ষতিকর দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমাদের দেশেও প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা প্রণয়ন করা দরকার। সাধারণ মানুষকেও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

আবু সালেহ মোহাম্মদ সায়েম : শিক্ষক, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ

 

প্লাস্টিক আবু সালেহ মোহাম্মদ সায়েম

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম