Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

অর্থনৈতিক সংকটে দেশ

বহুমুখী পদক্ষেপ ছাড়া সংকট উত্তরণ কঠিন হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অর্থনৈতিক সংকটে দেশ

দীর্ঘ সময় চলা বহুমুখী অর্থনৈতিক সংকট দেশবাসীকে কাবু করে ফেলেছে। দেশীয় ও বৈশ্বিক সংকটের তীব্রতা ক্রমবর্ধমান। ডলার সংকটের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। সম্প্রতি আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয় আশাব্যঞ্জক নয়। এসব কারণে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। ডলার সংকটে নিত্যপণ্য ও সেবার দাম বেড়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সিন্ডিকেটের কারসাজি। এতে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। মন্দায় বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে; মানুষের আয় কমে যাচ্ছে। এসবের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষ। মহামারি শুরুর আগে থেকেই দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছিল। করোনাকালে এ মন্দা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সম্প্রতি নানামুখী নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা আরোপ করে দেশে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এতে ডলারের ওপর চাপ কিছুটা কমলেও আমদানিনির্ভর শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে; এসব শিল্পের উৎপাদন কমেছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকার নানাভাবে প্রণোদনা দিচ্ছে। কিন্তু এ সুবিধা সবার কাছে যাচ্ছে না। মধ্যবিত্ত শ্রেণি বড় সংকটে পড়েছে; স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষের ঋণ বাড়ছে। বস্তুত ডলার সংকট কাটানো সম্ভব হলে সামষ্টিক অর্থনীতিতেই এর প্রভাব পড়বে। এ সংকট কাটানোর লক্ষ্যে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে। নিত্যপণ্যের দাম যাতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে সেজন্য পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ভালো মানের কর্মসংস্থান কমেছে। এ খাতের কর্মীরা যাতে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বেতন-ভাতা পান, তা নিশ্চিত করা দরকার। কয়লা ও গ্যাসের দামও বাড়ছে। এতে আমদানি ব্যয় আরও বেড়ে যাবে। এদিকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির পূর্বাভাস মিলছে না। এছাড়া বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়ছে। দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ না থাকলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমে যাবে। কাজেই দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

বেপরোয়া অর্থ পাচারের কারণে চলমান সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। অর্থ পাচারের ছিদ্রগুলো বন্ধ করতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। অতিরিক্ত মুনাফার লোভে যেসব ব্যবসায়ী কারসাজি করেন তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা দরকার।

বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী চলতি বছরের পাশাপাশি আগামী বছরও মন্দা থাকবে। কাজেই বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদেরও প্রস্তুত হতে হবে। সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে; বাহুল্য ব্যয় কমাতে হবে। কৃষি খাতে প্রণোদনা অব্যাহত রাখা দরকার। নিম্ন-আয়ের মানুষের কর্ম সংকট দূর করতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। সামগ্রিকভাবে কর্মসংস্থান সম্প্রসারণের বাধা দূর করার পদক্ষেপ নেওয়াও জরুরি।

 

অর্থনৈতিক

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম