বিশ্ব বন্ধুত্ব দিবস
বিপদের বন্ধুই আসল বন্ধু
অলোক আচার্য্য
প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০১৮, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, গোলাপ যেমন একটি বিশেষ জাতের ফুল, বন্ধু তেমন একটি বিশেষ জাতের মানুষ। পৃথিবীর বড় বড় খ্যাতিমান লেখক, কবি, গবেষক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী বন্ধু ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক নিয়ে নানা উক্তি করেছেন। তৈরি করেছেন গান, কবিতা বা সিনেমা। বাস্তব জীবনে প্রকৃত বন্ধুত্বের প্রমাণ দেয়া বা বন্ধুত্বের সুযোগে ক্ষতি করার বহু উদাহরণ রয়েছে। খাঁটি বন্ধু প্রত্যেক মানুষের জীবনেই প্রয়োজন। মহান দার্শনিক এরিস্টটল বলেছেন, দুর্ভাগা তারাই যাদের প্রকৃত বন্ধু নেই। আবার তিনিই বলেছেন, বন্ধু হল এক আত্মার দুটি শরীর। প্রত্যেক নতুন জিনিসকেই উৎকৃষ্ট মনে হয়, কিন্তু বন্ধুত্ব যত পুরনো হয় ততই হয় উৎকৃষ্ট। এসব মন্তব্যের অর্থ হল বন্ধু নামক সম্পর্কটির প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দেয়া। তবে তা হতে হবে প্রকৃত বন্ধুত্ব। বস্তুত পরিবারে মা-বাবা, ভাই-বোন থাকার পরও জীবনে অন্তত একজন বন্ধু খুবই দরকার। অন্য সবার কাছে যা ব্যক্ত করা যায় না, তা বন্ধুর কাছে অনায়াসেই বলা যায়। তেমন একজন বন্ধু পরম আত্মীয়ের চেয়েও বড় আত্মীয়।
তবে আজকের দিনে বন্ধু চেনাটাই সবচেয়ে কঠিন কাজ। ছোটবেলা থেকে আমরা ‘দুই বন্ধু ও ভালুকে’র গল্পটা জানি। যেখানে এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে রেখেই নিজে বাঁচার তাগিদে গাছে উঠে পড়ে। যদিও অন্য বন্ধু তাৎক্ষণিক বুদ্ধির জোরে বেঁচে যায়। কিন্তু এ গল্পটার নীতিকথাটি হল- বিপদের সময় যে বন্ধু তোমাকে ত্যাগ করে সে প্রকৃত বন্ধু নয়। তার সঙ্গ পরিত্যাগ করাই উত্তম। বন্ধুত্বের বিশ্বস্ততার উদাহরণ নিয়েও অনেক গল্প রয়েছে, যেখানে বন্ধু চরম বিপদের সময়েও বন্ধুকে পরিত্যাগ করেনি। এরকম একটি গল্প হল- প্রতিপক্ষের সঙ্গে তুমুল যুদ্ধের সময় এক সৈনিক একা যুদ্ধ করতে করতে গুলি খেয়েছে। তার থেকে একটু দূরে থাকা বন্ধুটি গুলিবিদ্ধ বন্ধুকে সাহায্য করার জন্য তার কাছে যাওয়ার অনুমতি চাইল। কমান্ডার তাকে সেখানে যাওয়ার বিপদ সম্পর্কে সাবধান করলে বন্ধুটি এসব চিন্তা না করেই বিপদের মুখে গুলিবিদ্ধ বন্ধুটির কাছে যায়। পরে সে বন্ধুর লাশ নিয়ে ফিরে আসে। তা দেখে কমান্ডার বলে, ‘তোমার বন্ধু তো মারা গেছে, তুমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কী পেলে?’ জবাবে বন্ধুটি বলল, আমি আমার বন্ধুর শেষ কথাটি শুনতে পেরেছি। ‘কী ছিল সেই শেষ কথাটি?’, জানতে চাইল কমান্ডার। ‘ও আমাকে দেখে বলেছে, আমি জানতাম তুমি আমার কাছে আসবে।’
আগষ্ট মাসের প্রথম রোববার বন্ধু দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে পালিত হয়ে থাকে। এই দিনে বন্ধুরা একে অপরকে উপহার দেয়। সবাই মিলে পার করে কিছুটা বাড়তি সময়। কবে কোথায় প্রথম বন্ধু দিবসের সূচনা হয়েছিল তা নিয়ে একাধিক মত প্রচলিত আছে। তবে ইতিহাসের কিছু তথ্য থেকে ধারণা করা হয় গত শতকের ত্রিশ থেকে চল্লিশের দশকের মধ্যবর্তী সময়ে বন্ধু দিবস পালনের রীতি শুরু হয়। ১৯৩৫ সালের দিকে আমেরিকায় প্রথম বন্ধু দিবস পালন হয় বলে মনে করা হয়। পরে বিভিন্ন দেশে তা ছড়িয়ে পড়ে।
সমাজে আজ নিঃস্বার্থ বন্ধুর খুব দরকার। বন্ধুদের সঙ্গে কৈশোর-যৌবনে কাটিয়ে আসা দিনগুলোই একসময় বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায়। আর আমরা মনে মনে বলি- ভালো থেকো বন্ধু।
অলোক আচার্য্য : প্রাবন্ধিক, পাবনা
sopnil.roy@gmail.com
