Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

এক মহীয়সী নারীর কথা

Icon

মামুনুর রশীদ

প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০১৮, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এক মহীয়সী নারীর কথা

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। ফাইল ছবি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক অমর কবিতার নাম। আর সেই মহাকাব্য যিনি রচনা করেছেন, তিনি হলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। বঙ্গবন্ধুর তার নেতৃত্ব দিয়ে পাকিস্তানি দুঃশাসনের নাগপাশ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশকে উদ্ধার করেছেন, যা সম্ভব হয়েছিল মহীয়সী নারী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অনুপ্রেরণায়।

তিনি জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন একাকী কিংবা দলীয় নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দিয়ে। দলের অসময়েও দক্ষ নাবিকের আসনে আসীন ছিলেন শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।

এই মহীয়সী নারী ১৯৩০ সালের আগস্ট মাসের ৮ তারিখে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ফুলের মতো গায়ের রঙ দেখে মা হোসনে আরা বেগম ডাকতেন রেণু বলে। সেই নামেই সবার কাছে পরিচিতি হয়ে গেলেন।

মাত্র তিন বছর বয়সে বাবা শেখ জহুরুল হক মারা গেলে দাদা শেখ আবুল কাশেম চাচাতো ভাই শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে রেণুর বিয়ে দেন। পাঁচ বছর বয়সে মা মারা গেলে শাশুড়ি মা সায়েরা খাতুন রেণুর চোখের পানি মাটিতে পড়তে দেননি। গভীর মমতায় নিয়ে এলেন নিজের ঘরে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই ফজিলাতুন্নেছাই প্রেরণাদায়ী মহীয়সী নারী।

যেখানে নারীদের ঘরের বাইরে বের হওয়া নিষিদ্ধ ছিল, সেখানে পড়ালেখা তো কল্পনাই করা যেত না। তবুও তিনি দমে যাননি। সেই সময়ে ঘরে বসেই পড়ালেখা করেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ধরনের বিদ্যা ছাড়াই তিনি ছিলেন প্রতিভাসম্পন্ন, জ্ঞানী, বুদ্ধিদীপ্ত, দায়িত্ববান ও ধৈর্যশীল।

বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী লেখার পেছনেও মূল প্রেরণা ও উৎসাহ ছিল বেগম ফজিলাতুন্নেছার। বঙ্গবন্ধু তার আত্মজীবনীতে সেই অবদানের কথা স্মরণ করেছেন প্রথমেই।

জীবন সংগ্রামের সব কণ্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করেও তিনি পরিবার সামলেছেন বেশ গুছিয়ে। সবকিছুর পরও তিনিই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর জীবন ও রাজনীতির শ্রেষ্ঠ ছায়াসঙ্গী। স্বৈরশাসক আইয়ুব সরকারের সময় রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে বঙ্গবন্ধুকে কারাবরণ করতে হয়।

এ সময়ে কাপড় সেলাই করে বাড়ি ভাড়া, সংসার চালানোর সবটাই তিনি করতেন। মাথা ঠাণ্ডা রেখে সবটাই তিনি সামলাতেন। সন্তানদের লেখাপড়া করানোর পাশাপাশি তাদের বাবার অভাবটা নিজের স্নেহ-ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতেন।

বায়ান্ন থেকে একাত্তর অবধি সংগ্রামে বেগম মুজিব বঙ্গবন্ধু মুজিবের পেছনে ছায়ার মতো ছিলেন। চিরসংগ্রামী মুজিবকে জীবনের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত আগলে রেখেছিলেন অপার মমতা ও ভালোবাসা দিয়ে, সংগ্রামের সাহস দিয়ে। পৃথিবীর মানচিত্রে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু। যারাই সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের সঙ্গী হয়েছিলেন, বেগম মুজিব ছিলেন তাদের সর্বাত্মক প্রেরণার উৎস।

বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে, নেতৃত্বের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের মধ্যে যখনই কোনো সংকটের কালো ছায়া ঘনীভূত হয়েছে, বেগম মুজিব সেই কালো ছায়া দূর করার জন্য পর্দার অন্তরালে থেকে দৃঢ়, কৌশলী ও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন।

মহীয়সী এই নারীর কথা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসের পরতে পরতে জড়িয়ে আছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের যে কালরাতে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে, সে সময়েও অর্থাৎ জীবনের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত বেগম মুজিব ছিলেন ইতিহাসের কালজয়ী এক মহানায়কের অনুপ্রেরণাদায়িনী হিসেবে।

বাঙালি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতিটি ধাপে ধাপে বেগম মুজিবের অবদান বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী হিসেবে নয়, প্রধানমন্ত্রীর মাতা হিসেবে নয়; একজন নীরব দক্ষ সংগঠক হিসেবে, যিনি ধূপের মতো নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন এবং বঙ্গবন্ধুকে হিমালয়সম আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।

মামুনুর রশীদ : সহ-সভাপতি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহীয়সী নারী

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম