আমানত সংগ্রহে লোভনীয় কৌশল
ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিতকরণ ও খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার নানা চেষ্টা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক খুব একটা সফলতার মুখ দেখছে না। এদিকে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে আমানত সংগ্রহে চলছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। মঙ্গলবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, কোনো কোনো দুর্বল ব্যাংক আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যে সর্বোচ্চ ১৩-১৪ শতাংশ পর্যন্ত সুদ অফার করছে। এ ধরনের উচ্চ সুদে আমানত নিলে সে প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী কমপক্ষে ১৬-১৭ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে হবে। এছাড়া কয়েকটি দুর্বল নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানত পেতে সর্বোচ্চ ১৭-১৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ প্রস্তাব করছে। সেক্ষেত্রে ঋণ দিতে হবে ২০-২১ শতাংশ সুদে। এই অসম প্রতিযোগিতার কারণে ঋণের সুদও বেড়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, এতে ঋণগ্রহীতারা পড়ছেন বিপাকে। এছাড়া উচ্চ সুদের এ টাকা ফেরত আসবে কিনা, সে বিষয়েও নেই কোনো নিশ্চয়তা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইতঃপূর্বে এ ধরনের অনিয়মের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, লোভনীয় অফারের মাধ্যমে আমানতের সুযোগ নিয়ে পরে গ্রাহক সুদ-আসল দুটোই খুইয়েছেন।
মূল্যস্ফীতি কমাতে আমানত ও ঋণে সুদের হার বৃদ্ধির কৌশল অস্বাভাবিক নয়। তবে সেটা সর্বোচ্চ ১২-১৩ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু বর্তমানে যেভাবে ১৭-১৮ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হচ্ছে, তাতে ঋণগ্রহীতা এ টাকায় ব্যবসায় নেমে বাড়তি সুদ প্রদাণের চাপে লাভের মুখ দেখবেন, এমন সম্ভাবনা কম। আর যদি এ অর্থ দীর্ঘমেয়াদি গৃহঋণে খাটানো হয়, তাহলে যিনি ঋণ নেবেন তিনি জেনেই নেবেন যে মারা গেলে এ ঋণ সম্পূর্ণ শোধ হবে না। এতে ব্যাংকের প্রদেয় ঋণের টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। তাই যেসব ব্যাংক এ পথে হাঁটবে, তাদের সম্পর্কে আমানতকারীদের সাবধান হতে হবে। কোনো ব্যাংক উচ্চ সুদে আমানতের প্রস্তাব দিলেই যাচাই-বাছাই না করে তা গ্রহণ করা ঠিক হবে না। অন্যথায় সে অর্থ ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কাই বেশি।
আমরা মনে করি, উচ্চ লাভে আমানত সংগ্রহ ও উচ্চ সুদে ঋণ প্রদানের যে প্রক্রিয়া এখন ব্যাংকগুলোয় চলছে, তা একটি অশনিসংকেত। বরং উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহের কৌশলে লুটতরাজের চক্রান্ত চলছে কিনা তা তদন্তের দাবি রাখে। এছাড়া যারা উচ্চ সুদে ঋণ গ্রহণ করবে, তাদের তা পরিশোধের মানসিকতা থাকবে কিনা, ঋণ প্রদানের আগে সেটিও নিশ্চিত হওয়া জরুরি। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, একীভূত হওয়ার ভয়ে কয়েকটি দুর্বল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানতের জন্য মরিয়া হয়ে গেছে। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। বরং দেশে এত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন রয়েছে কিনা তা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বিবেচনা করতে হবে। যেসব ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সৎ ও স্বচ্ছ মানসিকতা এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সক্ষমতা রয়েছে, তাদের ব্যাপারেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করা উচিত। যেসব দুর্বল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোপনে বা প্রকাশ্যে আমানত সংগ্রহে এ ধরনের কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে, সরকার তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।
