মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা
আর কত দীর্ঘসূত্রতা?
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
স্বাধীনতা লাভের ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন করতে পারিনি আমরা, এটি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। স্বভাবতই অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নিজের নাম এ তালিকায় না দেখেই পৃথিবী ত্যাগ করেছেন। মঙ্গলবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-মামলা ও বাছাইয়ে নানা কৌশলের কারণে আজও পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন করা যায়নি। জানা গেছে, উপজেলা পর্যায়ে কমিটির বাছাই করা তালিকা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্ভুল হয় না। ফলে পুনরায় যাচাইয়ের জন্য তা পাঠানো হয়। অপরদিকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) উপজেলা কমিটির বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানিতে বিলম্ব করে। এছাড়া সরকার পরিবর্তনের পর তালিকা থেকে বাদ পড়ে অনেকের নাম। তারা আবার প্রতিকারের জন্য উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। এভাবে ৫৩ বছর ধরে ঝুলছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়নের কাজ। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী জানিয়েছেন, এ তালিকা প্রায় চূড়ান্ত। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কখনো এ তালিকা আলোর মুখ দেখবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, আমলানির্ভর না হয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে যারা লিখেছেন, গবেষণা করছেন-এমন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে কমিটি করা উচিত ছিল। তা না করায় সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও ফলাফল শূন্যই রয়ে গেছে।
আমরা মনে করি, সময়কে জয় করে রণাঙ্গনের এখনো যারা আমাদের মাঝে রয়েছেন, তাদের সাক্ষ্য ও সুপারিশ লাভের মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির সুযোগ এখনো রয়েছে। কালক্ষেপণ করে এই সুযোগ হেলায় হারালে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এ ব্যর্থতার দায়ে আমাদেরই দুষবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে দেশে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৭৪৩ জন মুক্তিযোদ্ধাকে মাসিক ২০ হাজার টাকা করে সম্মানি ভাতা দিয়ে থাকে সরকার। এছাড়া ঈদ উপলক্ষ্যে ১০ হাজার করে দুটি বোনাস, বিজয় দিবসে ৫ হাজার টাকা এবং নববর্ষে ২ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হয়। পাশাপাশি খেতাবপ্রাপ্ত, শহিদ ও যুদ্ধাহত ১০ হাজার ৯৯৬ জন মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে সম্মানি ভাতা পেয়ে থাকেন।
স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকা তৈরি করতে না পারা দুঃখজনক। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা তাদের প্রাপ্য। কোনো ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার কারণে নয়, একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তারা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন। এমনকি অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সনদ পর্যন্ত নেননি। অথচ মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়েও অনেকে কারচুপির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে নাম লিখিয়েছেন। তারা নিশ্চয়ই গর্হিত কাজ করেছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন থেকেই জনদাবি রয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে অমুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দিতে হবে। তাদের চিহ্নিত করে অমুক্তিযোদ্ধা আখ্যা দিতে হবে। সেক্ষেত্রে যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন আছে অবশ্যই। তবে খেয়াল রাখতে হবে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা যেন এ প্রক্রিয়ায় বাদ না পড়েন। তেমনটি ঘটলে সেটি হবে অত্যন্ত দুঃখজনক। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়ে যারা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তাদের অবশ্যই ছেঁটে ফেলা দরকার। মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা অবিলম্বে প্রকাশ করা হবে, এটাই প্রত্যাশা।
